ঢাকা : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড’র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। প্রাণবন্ত ও নান্দনিক এই সফল শিল্পোউদ্যোক্তা ইউনুছ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রিজ (বিসিআই) ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক। তিনি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের অন্যতম উদ্যোক্তা, এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (এওএবি) সদস্য এবং ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) “এ” ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া সোনালী পেপারের বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি সোনালীনিউজের সঙ্গে কথা বলেন সফল শিল্পোউদ্যোক্তা মোহাম্মদ ইউনুছ ।
সোনালীনিউজ : মহামারি করোনার মধ্যে সোনালী পেপারের ব্যবসা কেমন চলছে?
মোহাম্মদ ইউনুছ : করোনার প্রথম ঢেউ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা কিংবা সাধারণ মানুষ দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও আমরা সোনালী পেপারের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
পরিচালনা পর্ষদ ও সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ শেয়ারহোল্ডারদের কথা চিন্তা করে মহামারির মধ্যেও জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে কাজ করছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ব্যবসা খারাপ গেলেও করোনার ক্ষত আমাদের কোম্পানিতে যাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা সবর্দা সজাগ।
সোনালীনিউজ : চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) সোনালী পেপারের আর্থিক অবস্থান কেমন?
মোহাম্মদ ইউনুছ : গত বছর থেকেই আমরা করোনা মহামারির মুখোমুখি হলাম। তবুও আমাদের কোম্পানির ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্ধি চলমান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয় সোনালী পেপার। যা এই কঠিন সময়ে আমাদের জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও অনেক ভালো হতো।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৪.১৯ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩.৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির নীট মুনাফা বেড়েছে ২১.১৫ শতাংশ।
এসময়ে সোনালী পেপারের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৯ পয়সা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৮ পয়সা।
শেয়ারহোল্ডারদের দোয়া ও আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় সোনালী পেপার সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম দিন দিন প্রসারিত করে যাচ্ছে।
সোনালীনিউজ : মহামারির মধ্যেও ব্যবসা ভালো করার কারণগুলো যদি একটু বলেন…
মোহাম্মদ ইউনুছ : করোনায় স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাগজের চাহিদা যখন কমতে শুরু করে তখন আমরা ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সেলস বাড়াতে জোর দেই। আর এ উদ্যোগে বেশ ভালো সাড়াও পেয়েছি।
অন্যদিকে ব্যাংক লোনে সুদের হার কম হওয়ায় অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের ব্যাংকিং খাতে ৯/৬ চালু হওয়ায় আমাদের অপারেটিং কস্ট অনেক কমে গেছে। এর ফলে সোনালী পেপারের মুনাফা বেড়েছে।
সোনালীনিউজ : ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানতে সুদের হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
মোহাম্মদ ইউনুছ : এ উদ্যোগটি ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এখন এর সুফল ভোগ করছেন দেশের সকল মানুষ।
ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ হওয়ায় অর্থনীতিতে সুফল মিলছে। উদ্যোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন। মহামারির মধ্যেও কর্মসংস্থানের হার ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোরও মুনাফা কমেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনার মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি বিরাজ করছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সোনালীনিউজ : সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের পথ চলার ইতিহাস ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম যদি শেয়ার করেন।
মোহাম্মদ ইউনুছ : সোনালি পেপার ১৯৭৭ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ইউনুছ গ্রুপ ২০০৬ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে।
গত বছরের (২০২০) ২৬ জুলাই দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেন শুরু হয় ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি সোনালী পেপারের। কোম্পানিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে “জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়।
রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত সোনালী পেপার কারখানায় প্রিন্টিং পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ উৎপাদন করা হয়। এর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩৫ হাজার টন। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা।এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
সোনালীনিউজ : শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন…
মোহাম্মদ ইউনুছ : গত কয়েক বছর ধরে সোনালী পেপার বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ হাতে নিলেও বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারনে এর সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। তবে ভবিষ্যতে সুফল পাওয়া যাবে। নতুন করে অর্থনীতির চাকা সচল হলে আগামীতে সোনালী পেপারের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশাবাদি।
যদি শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির প্রতি তাদের সমর্থন এভাবেই অব্যাহত রাখেন তাহলে পরবর্তীতে আয় ও লভ্যাংশ অবশ্যই বাড়বে। সেদিকে নজর রেখেই মহামারির মধ্যেও আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
সোনালীনিউজ : আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ ইউনুছ : আপনাকে ও সোনালীনিউজের সন্মানিত পাঠকদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সোনালীনিউজ/আইএ