ঢাকা : বাজেট ঘোষণার পরদিন রাজধানীর বাজারে মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়ে সাধারণ ক্রেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শুক্রবার (৪ জুন) কারওয়ানবাজার, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, গ্রিন রোড, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরাসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ-মাংস, শাকসবজিসহ সবকিছুর দামই বাড়তি। ছুটির দিন হওয়ার সুবাদে স্থানীয় এসব বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও ছিল বেশি। শুক্রাবাদ ও কলাবাগান মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৩০-৩৬০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৩০ টাকা, পাঙাশ ১৯০-২২০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৬০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ১৯০-২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০-১৯০ টাকা, গ্রাস কার্প ১৫০-১৭০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০-৭৫০ টাকা এবং শিং মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ১ কেজি বা ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা, কাচকি ৩৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
শুক্রাবাদ বাজারের মাছ বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে ক্রেতার ভিড় বেশি। তাই মাছের চাহিদা বেড়েছে। আড়ত থেকে বেশি দামে মাছ কিনতে হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
এদিকে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ডিমের। গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ টাকা, খাসি ৮০০-১০০০ টাকা, ব্রয়লার ১৩০-১৩৫ টাকা, লেয়ার ২২০-২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিম ৩২ টাকা হালি (পূর্বে ছিল ২৮-৩০ টাকা) ও হাঁসের ডিম ৪০ টাকা হালি (পূর্বে ছিল ৩৬-৩৮ টাকা) দরে বিক্রি হয়। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের শাকসবজির দামও। গোল আলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটোল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢ্যাঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাকসহ সব ধরনের শাক সবজির দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন গতকাল বিক্রি হয় ৫৫-৬৫ টাকায়, পেঁয়াজের ঝাঁজ মাঝে একটু কমলেও এখন আবার বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা। কাঁচামরিচ পূর্বে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয় ৬০ টাকা, ১ কেজি রসুন কিনতে গুনতে হয় ১২৫-১৩০ টাকা; পূর্ব মূল্য ছিল ১২০ টাকা। গোল আলুর দাম হয়েছে ২৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ২০ টাকায়। এ ছাড়া আদা ১০০-১২০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর (চায়না) ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। অথচ এসব সবজি এক সপ্তাহ আগেও পাওয়া যেত ৫-১০ টাকা কমে। এ ছাড়া মুদি দোকানগুলোয় সয়াবিন তেল ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
শুক্রাবাদ বাজারের মুদি দোকানি রফিকুল বলেন, নতুন করে তেলের দাম আরো বেড়েছে। নতুন যেসব বোতল আসছে সেগুলোর দাম ১৫২ টাকা করে। পুরনো বোতল ১৪০-১৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে এখন পর্যন্ত চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। ২৫ কেজির ওজনের নাজিরশাইল চালের বস্তা ১৬৫০-১৭০০ টাকা এবং মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা ৩০০০ টাকায় বিক্রি করছি।
কলাবাগান কাঁচাবাজারে আসা স্থানীয় একটি মেসের ম্যানেজার আশিক বিল্লাহ বলেন, ঢাকায় আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ রয়েছি তাদের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একটা মাছ কিনতে গেলে পাঁচ-ছয়শ টাকা লাগে। শাকসবজির দাম বেশি, তেলের দাম বেশি, চালের দামও বেশি। আমরা আসলে যাব কোথায়?
শান্তিনগর বাজারে ইলিয়াস হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, করোনার মধ্যে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বাজার মনিটরিং জোরদার করা উচিত ছিল; যা হয়নি। বরং আমাদের অল্প টাকা মধ্যে থেকে বড় অংশ বাজারে লুট হচ্ছে। পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
খিলগাঁও বাজারের দোকানি শফিকুর রহমান বলেন, বাজেটে কোনো কিছুর দাম কমলে সেটা পাইকারি বাজার থেকে আনার পরে কমে বিক্রি হবে। অর্থাৎ কমলেও সেটা তিন থেকে চারদিন পর কার্যকর হবে।
ইয়াকুব আলী আজম নামের এক ক্রেতা বলেন, আমাদের দেশে কোনো কিছুর দাম বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়। কিন্তু কমলে সেটা কার্যকর করতে গড়িমসি করেন ব্যবসায়ীরা। এটা রীতি হয়ে গেছে।
কারওয়ানবাজারের চাল বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, বোরো নতুন চাল বাজারে আসার পরেও চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। নতুন চালের দাম কিছুটা কম হলেও পুরনো চালের দাম বেশি। ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম কমছে না।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ