ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল

ঋণের সময়সীমা বাড়াতে অর্থমন্ত্রনালয়ে বিএসইসির চিঠি

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২১, ১১:৫৮ এএম
ফাইল ছবি

ঢাকা : ১৯৯৬ সালের পর ২০১০ সালে দেশে শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধস নেমেছিল। এতে পুঁজি হারিয়েছিল লাখো বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগকারীদের লাগাতার বিক্ষোভের পর ২০১৩ সালে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুনরর্থায়ন সহায়তা দিতে ৯০০ কোটি টাকার ‘পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল’ গঠন করেছিল সরকার।

তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। তহবিলের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়।

তহবিলটিকে স্থায়ী তহবিলে রূপান্তর করতে চায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

ঋণ পরিশোধের দিক বিবেচনা করে বর্তমান তহবিলের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে বিএসইসি। সংস্থাটি বিনিয়োগকারীদের নেওয়া সর্বশেষ ঋণের টাকা পরিশোধের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে চায়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে পাঠানো ওই চিঠিতে তহবিল গঠনের পটভূমিও তুলে ধরেছে বিএসইসি। বলেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ভয়াবহ ধসের সম্মুখীন হয়। তখন দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক নিচে নামতে ও বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমতে থাকে। মার্জিন ঋণগ্রহীতা অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ফোর্স সেলের আওতায় চলে যায়। আর যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ফোর্স সেল করেনি, তাদের দেওয়া ঋণের টাকা দীর্ঘ মেয়াদে আটকে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশ হয়ে পড়েন এবং বাজারের প্রতি আস্থা হারাতে থাকেন। বাজার চাঙা করার নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তখন ৯০০ কোটি টাকার তহবিলটি গঠন করা হয়।

বিএসইসি চিঠিতে বলেছে, ৯০০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৯৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আদায়ের হার শতভাগ। পুঁজিবাজারে লেনদেনের নিম্নগতির ধারা ঠেকাতে পরে ২০১৯ সালের মে মাসে আদায় করা টাকা থেকে ৮৫৬ কোটি টাকার একটি আবর্তনশীল তহবিল গঠন করে সরকার। তহবিলটির মেয়াদও তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

ঋণের সরল সুদ প্রথম দফায় ৯ শতাংশ থাকলেও পরে তা কমিয়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে নতুন সিদ্ধান্তে বলা হয়, ঋণের সুদ ও আসল বর্তমানে ৪ শতাংশ সরল সুদে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ১২টি কিস্তিতে ৩ বছরে পরিশোধযোগ্য।

বিএসইসি মনে করছে, ঋণ পরিশোধের বর্তমান মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা দরকার। কারণ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ না বাড়িয়ে কিস্তি নির্ধারণ করলে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে কম সময় পাবে। এতে কিস্তির পরিমাণও বাড়বে, যা সময়মতো ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য হবে।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিএসইসির তদারক কমিটি রয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান। তাঁর সভাপতিত্বে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে বর্তমানে আবর্তনশীল পদ্ধতিতে পরিচালিত পুনর্নিয়োগযোগ্য তহবিলকে স্থায়ী তহবিল হিসেবে গণ্য করার ব্যাপারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

পুঁজিবাজারের বর্তমান লেনদেনপ্রবণতা যেহেতু ইতিবাচক—এই সময়ে স্থায়ী তহবিল গঠনের দরকার আছে কি না, তা জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, বাজারের সার্বিক স্বার্থে দরকার আছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে ১০৮টি ব্রোকার হাউসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ জন। আর মার্জিন অংশে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৯৪৬ জন। তবে ৯০০ কোটি টাকা ঋণের এক-তৃতীয়াংশই পেয়েছেন আইসিবি ও তার দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা করা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

আইসিবি, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পেয়েছেন ৩০০ কোটি টাকার বেশি। বাকি ঋণ পেয়েছেন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউস মিলিয়ে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

সোনালীনিউজ/এলএ