ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার টপটেন গেইনার বা দর বাড়ার শীর্ষ তালিকা দখল করেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) লিমিটেড। সরকারি মালিকানাধীন এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম টানা নয় কার্যদিবসে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। লেনদেনেও ধারাবাহিকভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে কোম্পানিটি। তবে আজ হঠাৎ করেই বিক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯.৯৪ শতাংশ। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ ৯৫ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবারও কোম্পানিটির শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। তাতে দিন শেষে শেয়ারটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
কোম্পানিটির শেয়ারের দামে বড় ধরনের এ উত্থানে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসের তথ্য মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত ২৩ ডিসেম্বরও ডিএসইতে বিএসসির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র সাড়ে ৪৯ টাকা।
গত ২৬ ডিসেম্বর কোম্পানিটি তাদের চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪৮ শতাংশ বেশি। বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানির আয়ে বড় ধরনের এ উত্থান হয়েছে।
ইপিএসের বড় উত্থানের সংবাদকে কেন্দ্র করেই ২৬ ডিসেম্বর থেকে একটানা বাড়ছে এ শেয়ারের দাম। লেনদেনেও গতকাল পর্যন্ত উঠে এসেছিলো শীর্ষ ১০-এর তালিকায়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও কোম্পানিটি ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। এদিন বিএসসির ৬৯ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়। আর প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছিলো ৭ টাকা ৮০ পয়সা।
তবে বুধবার লেনদেন শুরুর আড়াই ঘণ্টা পর হঠাৎ করেই বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন লিমিটেডের শেয়ারে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়ে মূল্য স্পর্শ করছে সার্কিট ব্রেকারে। বেলা ১২টা ৪২ মিনিটে শেয়ারটি সর্বশেষ ৯৫ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। কোম্পানিটি ওই সময় পর্যন্ত ৪ হাজার ৬২০ বারে ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৮টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
বিএসসির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির জাহাজভাড়া বাবদ আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ সময়ে জাহাজভাড়া বাবদ কোম্পানিটি আয় করেছে ৯৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৪৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার কিছু বেশি। একইভাবে সার্ভিস চার্জ বা সেবা মাশুল বাবদ আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ বাবদ কোম্পানিটি আয় করেছে ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার মতো।
আয় বাড়ার এ খবরে সরকারি এই শিপিং কোম্পানির শেয়ারের দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। ২০২০ সালের মার্চেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৩৩ টাকা। সেই দাম দুই বছরের কম সময়ের ব্যবধানে প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ৯৫ টাকা ১০ পয়সায় অবস্থান নিয়েছে।
আজকে বাজারে টপটেন গেইনার বা সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বাড়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার এদিন দর ৩ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৯২ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আজ কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সা বা ৯.৯০ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটি সর্বশেষ ৫৭ টাকা ৭০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, লাভেলো আইসক্রিম, মেট্রো স্পিনিং, ফু-ওয়াং ফুড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ম্যাকসন্স স্পিনিং ও বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড।
সোনালীনিউজ/এমএইচ