লাফার্জহোলসিমের অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন বন্ধে ফের আপিল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২, ০৮:১৫ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: উচ্চ আদালতে গত ৫ জানুয়ারি রায় পাওয়ার পর আবারো চুনাপাথর চিপ বা অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন শুরু করেছিলো শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড। কিন্তু কোম্পানির পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় আপিল করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এখন কোম্পানিটি এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর লাফার্জহোলসিমকে চিঠি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা-সংক্রান্ত চিঠিটি তারা হাতে পায় ২০ সেপ্টেম্বর। ব্যবসা বন্ধের নির্দেশনার কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়, লাফার্জহোলসিম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়নি। এ চিঠি হাতে পাওয়ার পর পরই আইনি পদক্ষেপ নেয় কোম্পানিটি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা। শুনানি শেষে গত ১৬ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠির কার্যকারিতা এক মাসের জন্য স্থগিত করে রায় দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় অ্যাগ্রিগেটসের উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছিল লাফার্জহোলসিম। 

পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালতে আপিল করে শিল্প মন্ত্রণালয়। আপিল শুনানি শেষে গত ২৩ নভেম্বর চেম্বার জজের আদালত শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত থাকবে বলে রায় দেন। ফলে ২৩ নভেম্বর থেকেই কোম্পানিটির অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন আবারো বন্ধ হয়ে যায়। গত ৫ জানুয়ারি রায় পাওয়ার পর পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছিলো কোম্পানিটি।

গত বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাগ্রিগেটসের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ। এসব চুনাপাথর চিপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এগুলো ক্লিয়ার সাইজের ও গ্রেডেড চিপ। অর্থাৎ এসব চিপের সব আকার ও আকৃতি একই, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনের অন্যতম শর্ত। সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত কোম্পানিটির ক্লিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদন কারখানা প্রাঙ্গণেই এ চুনাপাথর চিপ ক্রাশিং ইউনিটটি স্থাপন করা হয়। ইউনিটটি বছরে ১২ লাখ টন কোণ আকৃতির চুনাপাথর চিপ উৎপাদন করতে সক্ষম। এ ইউনিট স্থাপনে কোম্পানিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

চুনাপাথর চিপের ব্যবসা থেকে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত ভালো আয় করেছে। পণ্যটির কারণে চলতি ২০২১ হিসাব বছরজুড়ে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ভালো ব্যবসা করেছে লাফার্জহোলসিম। সিমেন্ট ও চুনাপাথর চিপের ব্যবসা থেকে ভালো আয় হওয়ার কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। 

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১ হিসাব বছরে লাফার্জহোলসিমের মোট বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৫৩৪ মিলিয়ন টাকা। যেখানে আগের বছরে বিক্রি ছিল ১৬ হাজার ২২২ মিলিয়ন টাকা। সদ্য সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩৮৮ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৩৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময় যা ছিল ২ টাকা ০৩ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ০৪ পয়সা।

এদিকে সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ। যা কারখানা প্রতিষ্ঠার পর ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা কোম্পানিটির। এর আগের দুই বছর (২০১৯ ও ২০২০) কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড এবার আয় আরও বাড়তে পারত, যদি তাদের অ্যাগ্রিগেটস ব্যবসা চালু থাকত। গত বছর সিমেন্টের পাশাপাশি চুনাপাথর চিপ বা অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন শুরু করে লাফার্জ। এরপর থেকেই তাদের আয় তরতর করে বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে কোম্পানিটি ৩৫০ কিলো টন অ্যাগ্রিগেটস বিক্রি করেছে। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের একমাত্র কোম্পানি হিসেবে স্থানীয়ভাবে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন করছে। 

২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৭৫ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ডিএসইতে আজ লাফার্জহোলসিমের শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৭৯ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১০৭ টাকা টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

সোনালীনিউজ/এমএইচ