ঢাকা : শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর কিছু কিছু কোম্পানির যেন ফুলে-ফেঁপে উঠে। যদিও কোম্পানিগুলোর মুনাফা ও লভ্যাংশে ঝলকের ছিটেফোঁটা নেই, তবুও শেয়ারদর ও লেনদেনে অসম্ভব বেড়েছে।
অন্যদিকে, ভালো লভ্যাংশ ও মুনাফায় শীর্ষ কোম্পানিগুলোর যেন দুর্দিন বেড়ে গেছে। বাজার যতই সামনে যাচ্ছে, কোম্পানিগুলোর বেহাল অবস্থা যেন আরও বাড়ছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ এখন ফ্লোর প্রাইসের তিলক পরে ঘুমাচ্ছে। বাকিগুলোও ফ্লোর প্রাইসের কিনারায় ঘোরাফিরা করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ অ্যানালাইসিসের তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ১৯টি।
সর্বশেষ ৬০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া ১৯টি কোম্পানি হলো: এসিআই, বাটা সু, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার পেইন্টস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, গ্রামীণফোন, ইবনে সিনা, লিন্ডে বিডি, ম্যারিকো, যমুনা অয়েল, পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, রেকিট বেনকিজার, রেনেটা, সিঙ্গার, স্কয়ার ফার্মা, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ওয়ালটন হাইটেক পিএলসি লিমিটেড।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া এবং ১২৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়া গ্রামীণফোন, ২৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবিসি), ১৪৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া রেনেটা ফার্মা, ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া স্কয়ার ফার্মা, ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া সিঙ্গার বাংলাদেশ, ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার এবং ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ওয়ালটন হাইটেক এখন ফ্লোর প্রাইসে নজরবন্দি।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের ফ্লোর প্রাইস ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সা, রেনেটার ১ হাজার ৩০৩ টাকা ২০ পয়সা, স্কয়ার ফার্মার ২০৯ টাকা ৮০ পয়সা, সিঙ্গারের ১৫১ টাকা ৯০ পয়সা এবং ইউনিলিভারের ২ হাজার ৮৮৯ টাকা ৪০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর গ্রামীণফোনের শেয়ারদর উঠেছিল ৩০৫ টাকায়, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর ৫২৫ টাকায়, রেনেটার ১৩১৫ টাকায়, সিঙ্গারের ১৬০ টাকায় এবং ইউনিলিভারের ২ হাজার ৯৬০ টাকায়। এখন সব কোম্পানির শেয়ার দিনের পর দিন ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতাশূন্য অবস্থায় ঘুমাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে বর্তমানে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৪ হাজার ৭৬০ টাকায়। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫ হাজার টাকার ওপরে লেনদেন হয়। তারপর ধারাবাহিক পতনে ফ্লোরমুখী হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় অবস্থানে কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৮০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি ২০২২ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ৩০০ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয় ২ হাজার ৪২১ টাকা ৫০ পয়সায়। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এর দর ২ হাজার ৫০০ টাকায় উঠেছিল। তারপর ক্রমাগত পতনে পড়ে এখন ফ্লোর প্রাইসের কিনারে লেনদেন হচ্ছে।
তৃতীয় অবস্থানে কোম্পানি বহুজাতিক লিন্ডে বিডি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৫৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৮৮৩ টাকা ৬০ পয়সায়। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এর শেয়ার ১ হাজার ৪৩৫ টাকায় লেনদেন হয়েছিল। সবশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা ৮০ পয়সায়।
চতুর্থ অবস্থানে বার্জার পেইন্টস। কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৮০ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ৭১১ টাকা ৬০ পয়সায়।ফ্লোর প্রাইস আরোপের কিছুদিন পর ১ হাজার ৮১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তারপর পতনের কবলে পড়ে এখন ফ্লোর প্রাইসের আশপাশে ঘোরাফিরা করছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল ও যমুনা অয়েল ৩০ জুন ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের যথাক্রমে ১৫০ শতাংশ নগদ, ১২৫ শতাংশ নগদ ও ১২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
কোম্পানি তিনটির ফ্লোর প্রাইস হলো—মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ১৯৮ টাকা ৫০ পয়সা, পদ্মা অয়েলের ২০৯ টাকা ২০ পয়সা এবং যমুনা অয়েলের ১৬৭ টাকা ৩০ পয়সা। কোম্পানিগুলোর শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ১৯৯ টাকা ২০ পয়সা, পদ্মা অয়েলের ২১০ টাকা এবং যমুনা অয়েলের ১৭০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানি তিনটির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসের কিনারে এসে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে।
১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সুর ফ্লোর প্রাইস ৯২৬ টাকা ৪০ পয়সা। সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫ টাকা ৯০ পয়সায়, যা ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর ১ হাজার ৪০ টাকার ওপরে উঠেছিল।
৬৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া দেশীয় প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস ২৭৩ টাকা ২০ পয়সা। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর ২৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এখন ২৭৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়ে ফ্লোর প্রাইসের দিকে হাঁটছে।
অন্যদিকে, ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ইবনে সিনার ফ্লোর প্রাইস ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩০৭ টাকা ৬০ পয়সা, যা ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর ৩৪২ টাকায় লেনদেন হয়েছিল।
ইউনাইটেড পাওয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে ১৭০ শতাংশ এবং ফ্লোর প্রাইস ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৩৪ টাকা ৩০ পয়সায়। ফ্লোর প্রাইসের মাত্র ৬০ পয়সা ওপরে লেনদেন হচ্ছে। তিন-চার দিন আগেও শেয়ারটি ২৪৫ টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। তবে এর আগে একাধিকবার ফ্লোর প্রাইস ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে।
স্বল্প মূলধনি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে। ১৪০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস ১ হাজার ৮৫৬ টাকা ৩০ পয়সা।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর শেয়ারটি ২ হাজার ১০৫ টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার ১ হাজার ৮৭২ টাকায় ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে, যা ফ্লোর প্রাইস থেকে মাত্র ১৬ টাকা বেশি।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ