ঢাকা : মূল্যস্ফীতির চাপ আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানান শর্তে নতুন বিনিয়োগ কমেছে সাধারণের। বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন বেশি মানুষ। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তার চেয়ে বেশি ভেঙেছেন গ্রাহকরা। একইভাবে চলতি বছরের জুন মাসেও নিট বিক্রির ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল ২৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানান শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে। কোনো গ্রাহকের ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশ কমানো হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমাও কমানো হয়। আর ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। এতে বিক্রি কমছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১২ মাসে (জুলাই-জুন) মোট ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এসময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি যা হয়েছে সেটা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ সম্ভব হয়নি। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমে ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধিতে নেমেছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা ব্যাংক থেকে উল্টো ৩ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছে।
[204132]
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের সবশেষ মাস এবং চলতি বছরে একক মাস জুনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। একই মাসে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ নিট বিক্রির ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল ২৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতাও কমিয়ে ফেলছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয় ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছর ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা।
দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো এর সুদহার ব্যাংকের তুলনায় বেশি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই