মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৩০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ ১৫ কোম্পানিতে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩, ০৪:৪২ পিএম

ঢাকা: মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৩০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ ১৫ কোম্পানিতে। দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাত নিয়ে শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) সিকিউরিটিজের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

ইবিএল সিকিউরিটিজ বলছে, তালিকাভুক্ত যে ১৫ কোম্পানিতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বেশি বিনিয়োগ রয়েছে সেগুলো হলো রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেক্সিমকো ফার্মা, ম্যারিকো, ব্যাংক এশিয়া, বাটা শু, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌লস কোম্পানি, প্রিমিয়ার ব্যাংক, অলিম্পিক, এসিআই লিমিটেড ও সামিট পাওয়ার। এসব কোম্পানিতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিলের মোট আকারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

ইবিএল সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের শেষে মেয়াদি ও বেমেয়াদি মিলিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডের মোট আকার ছিল ১১ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর আকার প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর বেমেয়াদি ফান্ডের আকার ৫ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা।

এসব কোম্পানির মধ্যে চলতি বছরের মার্চের শেষে মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিলগুলোর সম্মিলিতভাবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ছিল রেনেটার শেয়ারে। এ কোম্পানিতে ৬৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ ছিল বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ছিল স্কয়ার ফার্মার শেয়ারে, যা পরিমাণে প্রায় ৪৪৭ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ গ্রামীণফোনে, যার পরিমাণ ৪২৮ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানিতে (বিএটিবিসি), ৩৯৩ কোটি টাকা। পঞ্চম অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মায় বিনিয়োগের পরিমাণ ২১০ কোটি টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। তহবিলগুলোর মোট বিনিয়োগের ২৪ শতাংশ অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশই রয়েছে এ খাতে। বিনিয়োগের দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ খাত ব্যাংক। এ খাতে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিনিয়োগের প্রায় ১৬ শতাংশ।

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে ৩৬টি। গত বছরের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ ফান্ডের তালিকা তৈরি করেছে ইবিএল সিকিউরিটিজ। তালিকাটির শীর্ষে রয়েছে আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১। এরপর আছে যথাক্রমে আইসিবি থার্ড এনআরবি, আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক, ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ড। সাতটি ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবির সহযোগী সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি।

গত বছর পারফরম্যান্সের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০ ফান্ডের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ছিল ১০টি কোম্পানিতে। কোম্পানিগুলো হলো বিএটিবিসি, বিকন ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা, এক্‌মি ল্যাবরেটরিজ, সাবমেরিন কেব্‌ল, রেনেটা, আরএকে সিরামিকস, স্কয়ার টেক্সটাইল, সামিট পাওয়ার ও গ্রামীণফোন।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের ধসের পর থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে নানা অনিয়ম ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস (ইউএফএস) নামের একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বেশ কিছু সম্পদ ব্যবস্থাপক বিনিয়োগকারীদের তহবিলের টাকা নয় ছয় করেছে। যে কারণে পুরো খাতের ওপর থেকে আস্থা হারান বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বর্তমানে দুই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড বা তহবিল রয়েছে। তার একটি মেয়াদি তহবিল, অপরটি বেমেয়াদি তহবিল। মেয়াদি তহবিল বলতে সেসব তহবিলকে বোঝানো হয়, যেগুলোর নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ রয়েছে। মেয়াদ শেষে এসব মিউচুয়াল ফান্ড অবসায়িত হয়। আর বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বলতে সেসব তহবিলকে বোঝানো হয়, যেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। সাধারণত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তাদের লেনদেন হয়। বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয় না।

এআর