বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ: মেহেদী আরাফাত

  • আবদুল হাকিম  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৭:৪৭ পিএম
রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও কাজী মেহেদী আরাফাত।

ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি ব্রোকার হাউজের ভুমিকাও অপরিসীম। পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সবশেষ ৫২টি ট্রেক হস্তান্তর করেছে। এরমধ্যে ‘রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড একটি। কোম্পানিটির বিভিন্ন পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সোনালীনিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও কাজী মেহেদী আরাফাত। স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোনালীনিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালীনিউজ: বর্তমান বাজারের সার্বিক বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

মেহেদী আরাফাত: মার্কেটে কাজ করতে প্রয়োজন দক্ষ জনবল এবং ভালো একটা নেটওয়ার্ক। সে দিকটা বিবেচনা করে আমরা শক্তিশালী একটা টিম তৈরি করেছি, যাদের এই মার্কেটে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়াও ভালো একটা নেটওয়ার্ক তাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের টিম মেম্বারদেরও পরিচিত ছোট বা বড় বিনিয়োগকারী রয়েছে যাদেরকে আমাদের কাছে আসতে আকৃষ্ট করতে পেরেছি।

তবে দীর্ঘদিন বাজারের মন্দা পরিস্থিতি এবং ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম ট্রেড করতে হচ্ছে। এটা একটা প্রতিবন্ধকতা বলা যায়। এমন প্রতিবন্ধকতা ব্রোকার হাউসগুলোর জন্য ফলদায়ক নয়। এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা দ্রুত উত্তরণ করবো বলে আশা করছি।

সোনালীনিউজ: বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কেটে আপনাদের কাজের প্রসার কেমন হচ্ছে?

মেহেদী আরাফাত: ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু টার্নওভার করেছি। মার্কেটে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে যারা বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে তারা আমাদের সাথে কাজ করবেই। বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি।

দেখা যায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করে। একজন ভালো সিইও যদি কোম্পানি পরিবর্তন করে, দেখা যায় তাকে বিশ্বাস করে কাস্টমাররা তার নতুন ঠিকানায় চলে যায়। এজন্য বলতে পারি আমরা নতুন করে শুরু করলেও এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নয়, কারণ আমরা দীর্ঘদিন বাজারের সাথে রয়েছি, সুতরাং ছোট বা বড় বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাজে সহজে চলে আসবে। এছাড়া আমরা যদি সন্তোষজনক সার্ভিস দেই বিনিয়োগকারীরা না এসে পারবে না।

এর আগে আমি শিক্ষক হিসেবে যেখানে প্রশিক্ষণ দিতাম, সেখানে দেখা যেত বিভিন্ন কোম্পানির এমডি ও সিইওরা ক্লাস করতেন। তাদের সাথেও আমার সম্পর্ক অনেক বেড়েছে, তাই আমি আশা করছি এটা আমার কাজে অনেক বেশি সহায়ক হবে। বিশেষ করে আমার আগের কাজগুলো মার্কেট রিলেটেড হওয়ায় আমি বেশি আশাবাদী। বাজার সংক্রান্ত যত জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি তাদের মাধ্যমেও দেখা যাবে অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে আমাদের একটা বিশেষ টার্গেট থাকবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়াতে, আমরা তাদের সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দেবো। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ পেতে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনাও রয়েছে।

সোনালীনিউজ: কাস্টমার সার্ভিসের ক্ষেত্রে আপনাদের বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কী?

মেহেদী আরাফাত: এর আগে যেহেতু আমি বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে কাজ করেছি তাই সিইও হিসেবে আমার পরিকল্পনা রয়েছে ফ্রি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার বাড়ানো। আমাদের বিনিয়োগকারীরা যাতে গুজব নির্ভর বিনিয়োগ থেকে সরে এসে গবেষণা করে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়াও তারা যেন স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে সরে এসে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে, সেই বিষয়ে তাগিদ দেবো। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে আসায়। দেখা যায়, একটা শেয়ার কিনলো পরের দিন শেয়ারের দামটা কমে গেলো, তখন ওই ব্যক্তির কাছে যত শেয়ার আছে সব বিক্রি করে দিলো। এরপর এই লোকসান উঠাতে গিয়ে আবার আরেক জায়গায় লস খায়। এই স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনায় শেয়ারবাজারে আসলে লোকসান ছাড়া উপায় নেই। শেয়ারবাজারে দেখা যায় শেয়ারের দাম কমলে সেটা বাড়তে দুই-তিন মাস সময় লাগে। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ সব চেয়ে ভালো উপায়। এক্ষেত্রে যাতে বিনিয়োগকারীরা লোকসানে পড়তে না হয় সেটার জন্য আমরা কাজ করবো। আমরা তাদের সঠিক পদ্ধতিগুলো বুঝাবো যাতে তারা এখান থেকে লাভবান হতে পারে।

মূলত আমরা অনলাইন ট্রেডিং, ডিএস’র অ্যাপসের মাধ্যমে সার্ভিস দেবো এছাড়াও খুব দ্রুত ওএমএস চালু করবো। আমরা দক্ষ জনবল দিয়ে সকল সার্ভিস দেবো, যারা দীর্ঘদিনের মার্কেট সম্পর্কে অভিজ্ঞ। আমরা বেশ কিছু জনবল নিয়েছি, যাদের দিয়ে সবচেয়ে ভালো সার্ভিসটা আমরা কাস্টমারকে দেবো। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও, লেজার অনলাইনে চলে যাবে এবং মোবাইলে মেসেজ পাবে যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী তার সকল কিছু আপডেট পাবে এবং সে দেখতে পাবে তার পোর্টফোলিওর কি অবস্থা, লেজারের কি অবস্থা, কত টাকা ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বা কত কমিশন কাটা হয়েছে ইত্যাদি।

সোনালীনিউজ: বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন লোনের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

মেহেদী আরাফাত: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন যাতে সর্বনিম্ন রাখা যায় সেই বিষয়টা আমরা গুরুত্ব দেবো। মার্জিন লোনের ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করবো সর্বনিম্ন রাখার। আমরা আমাদের নিজস্ব ভবনে অফিস করেছি অর্থাৎ কোম্পানির নিজস্ব ভবন তাই আমাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসের জায়গাটা আরো বেশি মজবুত হবে। এজন্য আশা করছি বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পাবে এবং আকৃষ্ট হবে আমাদের কাছে আসতে।

সোনালীনিউজ: আপনাদের কোম্পানির অন্য বিজনেস কি কি?

মেহেদী আরাফাত: কোম্পানির অন্যান্য বেশ কয়েকটা ব্যবসা রয়েছে সেগুলো ভালোই চলছে। তবে রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। কোম্পানির অন্য ব্যবসার সাথে এটার কোন সম্পর্ক নেই। এই কোম্পানি পুরোপুরি স্বাধীনভাবে চলবে। আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে রহমান ইক্যুইটিকে ঘিরে, আমরা সে আলোকে কাজ করছি।

সোনালীনিউজ: মার্কেটে আপনাদের প্রত্যাশা কেমন?

মেহেদী আরাফাত: প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে আমি বলতে চাই ‘রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’ সেরা ২০ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকবে। আমাদের আশার দিক হচ্ছে কিছু বিনিয়োগকারী আছেন যারা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লেনদেন করতে আগ্রহী। তাদের মতো এমন যারা আগ্রহ নিয়ে আমাদের কাছে আসবে, তাদেরকে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করবো। আমাদের আরেকটা সুবিধার দিক হলো, আমরা ডিএসই এবং সিএসই দুইটাতেই অনুমোদিত। অনেক ব্রোকারেজ হাউজ আছে যাদের শুধু ডিএসই অথবা শুধু সিএসইতে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে কিন্তু আমরা দুইটাতেই থাকতে আবেদন করেছি।

সোনালীনিউজ: ডিএসই এবং সিএসই দুই প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত থাকার সুবিধা কি?

মেহেদী আরাফাত: এখানে সুন্দর হতো যদি সকল ব্রোকারেজ হাউজে ডিএসই এবং সিএসই দুইটাতেই লেনদেনের সুযোগ রাখতো। তবে অনেক ব্রোকারেজ হাউজের সিএসইতে অনুমোদন না থাকায় বিনিয়োগকারীরা সমানভাবে ডিএসই এবং সিএসইতে লেনদেন করতে পারছে না। এজন্য সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণটা কম হয়। ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুইটা প্লাটফর্মে লেনদেনের সুযোগ রাখলে দুই জায়গায় সমানভাবে লেনদেন করার সুযোগ থাকতো, এবং সিএসই প্লাটফর্মটাও আরো চাঙা থাকতো। কিন্তু এখন সিএসইতে বিনিয়োগকারী কম যাচ্ছে এবং লেনদেনও কম হচ্ছে।

ওয়াইএ