জমজমাট ফুলের বাজার

শত কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

ঢাকা : পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ আগামী দিনের অন্যান্য দিবসগুলোর বাজার ধরতে প্রস্তুত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুল চাষিরা।

বিশেষ করে বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের বাকি মাত্র এক দিন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাকি আছে মাত্র আর কয়েকটা দিন। তাই ফুল নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পুরো গদখালি পানিসারা অঞ্চল সেজেছে ফুলের সাজে। চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। সামনে আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসসহ অন্যান্য দিবসের বাজার ধরতেই এই প্রস্তুতি চাষিদের।

ফুলের রাজধানী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা ও এর আশপাশের এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রড স্টিক, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল।

চলতি মৌসুমে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসহ অন্যান্য দিবসগুলোর বাজার সামনে রেখে তা পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন চাষিরা।

উৎসব পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে, পোকার আক্রমণ ও পচন রোধে নিচ্ছেন পরিচর্যা। চাষিদের দাবি, চাহিদা থাকায় উৎসব এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দাম বাড়বে এবং তারা লাভবান হবেন।

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের সৈয়দপাড়ার ফুল চাষি পারভেজ বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা গাঁদা ও ২ বিঘায় রজনিগন্ধা চাষ করেছি। ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাদা ফুল বিক্রি করব। এজন্য এখন ফুলের পরিচর্যা করছি। বিশেষ করে ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারব।’

পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি কুরবান আলী বলেন, ‘আমার ২ বিঘা ৪ কাটায় গোলাপ বাগান রয়েছে। আমার বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ ধরনের ফুলের ভালোবাসা দিবসে বেশ চাহিদা থাকে।’

তিনি জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছে এখন নতুন কুঁড়ি রয়েছে। এগুলো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসের আগেই ফুলের দাম বাড়বে।

কুরবান বলেন, ‘আশা করছি, এক একটি গোলাপের পাইকারি দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে পাব।’

পানিসারা গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা যারা ফুলের চাষ করি, তারা উৎসবকে ঘিরেই চাষ করি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে আমরা পর্যাপ্ত ফুল মজুত করেছি। এখন প্রতিটি জারবেরা পাইকারি ৮/১০ টাকা দরে, গোলাপ ১৫/১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সামনে এসব ফুলের দাম তিনগুন হয়ে যাবে। কারণ এ বছর ভাইরাসের কারণে ফুল নষ্ট হয়েছে। এজন্য চাহিদার তুলনায় ফুলের যোগান কিছুটা কম।’

একই এলাকার ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, আসন্ন তিনটি দিবস সামনে রেখে বাকি অন্যান্য যে কয়টি দিবস আছে সেটাকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। গোলাপগুলো ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া নানা ধরনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে যাতে ফুল নষ্ট না হয়। এ বছর ফুলের ভালো দাম পাব, এমনটাই আশা করছি।

তিনি জানান, বর্তমানে গোলাপ প্রতি পিস ১৫-১৬ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০-১২ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ১৫-১৭ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস ১২টাকা, গাঁদা (প্রতি হাজার) ২০০-২৫০ টাকা, জিপসি প্রতি পিস ১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা (১০০ পিস) ৫০০ টাকা, চায়না গোলাপ (প্রতি পিস) ২৫-২৬ টাকা, ভুট্টা (প্রতি পিস) ১২ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ফুল চাষিদের নেতা যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা সারা বছর ফুল বিক্রি করলেও আমাদের মূল ব্যবসা হয় বেশকিছু উৎসব ঘিরে। ফুল সারা বছরই বিকিনিকি হয়। তবে উৎসবকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এবং কৃষকরা সেই অনুযায়ী ফুল উৎপাদন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত দিন পার করে থাকে। এ বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।’

তবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সামনের দিবসগুলোতে পানিসারা ও গদখালী অঞ্চল থেকে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তিনি। আসন্ন সামনের তিনটি দিবসে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও বছরে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ফুল এ অঞ্চল থেকে বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

[217413]

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ বছর উপজেলার ৬৩০ হেক্টর জামিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপের চাষ হয়েছে বেশি। ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে নানা রঙের গোলাপের চাষ হয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়।

সারা বছর কমবেশি ফুল বিক্রি হলেও সাধারণত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১ বৈশাখ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফুল বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে ইংরেজি নববর্ষ, মহান শহীদ দিবস, বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী। এই দিবসগুলোতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শুভেচ্ছা জানাতে অন্যতম অনুষঙ্গ তাজা ফুল। তাই শীত থেকে শুরু করে গ্রীষ্ম আসার আগ পর্যন্ত সময়টা ফুলের মৌসুম হিসেবে পরিচিত।

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ফুলের চাষের স্থান হিসেবে সুখ্যাতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের। ১৯৮২ সালে শের আলী নামে একজন ফুল চাষি সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে ফুলের চাষ শুরু করেন ।

এমটিআই