বাড়তি শুল্ককেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা

সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না খেজুর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম

ঢাকা:‘অতি সাধারণ ও নিম্নমানের’ খেজুরের খুচরা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এতে দোকানদারদের অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুর প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।  মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. ফুয়ারা খাতুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে আমদানি করা বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক ও করাদি এবং আমদানিকারকের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতি কেজি খেজুরের মানভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নিরুপণ করা হয়েছে।

[219398]

যদিও সরকার নির্ধারিত দামে কোথায় খেজুর মিলছে না। বাজারে সবচেয়ে কম দামের খেজুর ‘জাইদি’ জাতের। এই খেজুর প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যেটি সরকার নির্ধারিত দাম ১৫০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর রোজায় যে খেজুর পাইকারি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই খেজুরের ওপরে এবার শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৮ টাকা। এতে পাইকারি বাজারেই খেজুরের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

[219387]

বাদামতলীর খেজুর ব্যবসায়ী শাওন বলেন, আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবসময় অল্প লাভেই বিক্রি করে থাকি। আমাদের চিন্তা থাকে লাভ অল্প হলেও বিক্রি যদি বেশি হয়, তাহলে লাভ এমনিতে বেশি হবে। আমাদের বিক্রি হয় কেনার ওপর ভিত্তি করে। যেই খেজুর আগে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতাম, সেখানে এখন ৩৫০ টাকা শুল্ক দেওয়া লাগতেছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ভ্যাট বাড়ানোর ফলে খেজুরের দাম বেড়েছে। 

এই বিক্রেতার দাবী, সরকার যদি শুল্ক কমিয়ে দেয় তাহলে খেজুরের দাম অটোমেটিক কমে যাবে। জনগণের ভোগান্তি হবে না। এখন সবাই একতরফা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করছে। আসল ঘটনা তো অন্য জায়গায়। আমরা আমদানি করি, সেটার শুল্ক যদি বেশি দিতে হয়, তাহলে দাম তো বাড়বেই। এটা হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসা। ফলে খুচরা বিক্রেতারা যে দামে কেনেন, তার চেয়ে বেশি মুনাফায় খেজুর বিক্রি করছেন।

[219389]

খেজুর কিনতে গিয়ে জসিম উদ্দীন নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে খেজুর গত বছর কিনেছিলাম ৩০০ টাকায়, সেটা চাইতেছে ৬৫০ টাকা। পছন্দও হচ্ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে ১২০০ টাকা কেজি খেজুরের ২০০ গ্রাম কিনলাম। পরিচিত দোকানদার মন খারাপ বুঝে বললেন, জায়গা মতো কোনো খবরদারী বা নজরদারি কোনোটাই নাই। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাদামতলীতে খেজুরের বস্তা প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে কমপক্ষে ১০০০ টাকা। একদিকে রমজানে স্কুল খোলা রাখতেই হবে, সেটা নিয়ে কতো কোর্টকাচারি চললো। খেজুরে বাড়তি দাম, বরই খাওনের পরামর্শ মন্ত্রীর। সেটা নিয়েও কতো কতো সমালোচনা। কিন্তু খেজুর নাগালে এলোই না।

রাজধানীর বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাত ও আকার অনুযায়ী দেশে কমপক্ষে ৩০ ধরনের খেজুর বিক্রি হয়। এর মধ্যে দাম কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘জাইদি’ ও বস্তায় আসা খেজুর। এটি আসে ইরাক থেকে। এছাড়া আজোয়া, মরিয়ম, মাসরুক, ডালা-আলজেরিয়া, নাঘাল, সায়ের, মডজুল, কালমি, ফেনছি, ইরান ও জর্ডানের মরিয়ম, লাকজারি, সুগাই, তিউনিসিয়া থাল, সুফকারি, জাম্বু, মাবরুম, দাব্বাস, জাহেদি, রেজিজ, আমিরাতের লুলু ও বারহি—বাজারে এসব খেজুরের চাহিদা রয়েছে।

দেশের বাজারে প্রতি কেজি মারিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, মাবরুম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মেডজুল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দাবাস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। আজোয়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি। আজোয়া এবং মরিয়ম ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। 
বাজারে আরও বেশি দামের খেজুরও আছে। তবে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জাইদি খেজুর, দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় পাইকারি বাজারে সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে।

এসআই/আইএ