গাজীপুর: দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র তৈরি পোশাক শিল্প। তবে বৃহৎ এ শিল্প সেক্টরে কর্মরত লাখ-লাখ পোশাক শ্রমিকরা। আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির পূর্বেই তাদের চলতি মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস সঠিক সময়ে পাবেন কি-না।
এ নিয়ে হতাশা ও শঙ্কায় ভোগছেন। কিছুতেই তারা ভরসা করতে পারছেন। সরকার ও মালিক পক্ষের দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি। পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, প্রায় দেখতে-দেখতে ৯ রমজান অতিবাহিত হতে চলছে। এরই মধ্যে দেশের পোশাক শিল্পাঞ্চল গুলোতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে কারাখানা মালিকদের।
[219994]
এ দিক চিন্তা করলে বড়-বড় গ্রুপ কারখানার মালিকরা তাদের শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করতে পারলেও মাঝারি ও ছোট কারখানার মালিকরা তালবাহানা করতে পারেন। এমন শঙ্কা তাদের কুড়ে খাচ্ছে বলে জানান, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক শ্রমিকরা। তারা আরও বলেন,ঈদের আনন্দ দেশের সকল পোশাক শ্রমিকরা সমান তালে উপভোগ করলে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে উৎসাহ ও আনন্দ থাকবে। আর যদি এমন হয় এক এলাকার শ্রমিকরা বেতন বোনাস সঠিক সময়ে পাচ্ছে। অন্য এলাকার পোশাক শ্রমিকরা বেতন বোনাসের জন্য আন্দোলন করছে। তাহলে এটা তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য মারাত্মক আগাত হবে।
সরেজমিনে, গাজীপুরের অঞ্চলের টঙ্গী, মৌচাক সফিপুর, কোনাবাড়ী ও মাওনা। অপর দিকে সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের জামগড়া, বাইপাস, নরসিংহ পুর, সাভার ও আশুলিয়ার আশেপাশের বেশ কিছু এলাকার পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
এ দিকে বুধবার (২০ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী কলকারখানা অধিদপ্তরের সামনে সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেডের শ্রমিকরা জানান,তাদের কারখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে তারা মালিক পক্ষের লোকজনের সঙ্গে মঙ্গলবার বাকবিতন্ডা করেন। এর জেরে তারা কারখানার গেটে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছে। তাই বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থা নিয়েছেন।
[219991]
এ সময়ে আকলিমা আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন,তারা বকেয়া বেতনের কথা বললেই মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেয়। এখন আমরা মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পাওয়া নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তিনি বলেন, সামনে কিছু দিন পরই ঈদ। সন্তানদের জমা কাপড় কি ভাবে কিনে দিবো। তারা তো আমাদের দিয়ে তাকিয়ে আছে।
পোশাক শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথ গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে, ধারাবাহিক ভাবে পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নির্ধারিত কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করতে হচ্ছে। এতে তাদের আয় কিছুটা বাড়ছে। তারপরও বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির জন্য মাসের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।এ অবস্থায় শ্রমিকরা যদি তাদের নিয়মিত বেতন ভাতা পেতে ঝামেলায় পড়েন। তাহলে তারা স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করতে পরবেন। একটা পর্যায়ে তারা মানসিক টেনশনে ভুগবে।এতে করে শিল্পের পণ্য উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার পড়বে।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন জানান,টঙ্গীর সিজন্স কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলো। তবে তাদেরকে বুঝিয়ে কারখানায় যোগদানের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,গাজীপুর শিল্প পুলিশ সর্তক রয়েছে। আসছে ঈদের ছুটির আগে যাতে কোথাও কোন অবস্থাতেই বেতন নিয়ে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও শ্রমিক প্রতিনিধি ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
[219971]
অপর দিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো.নজরুল ইসলাম চৌধুরী। বুধবার (২০ মার্চ) শ্রমিক-মালিক ও সরকারপক্ষের বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে বলেন, দেশের কোন শিল্পাঞ্চলেই পোশাক শ্রমিকদের ঈদের আগে কোন অজুহাতে চাকরি থেকে ছাঁটাই বা কারখানা বন্ধ করতে পাবেন না মালিকরা। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে মালিকদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে ঈদের ছুটির আগেই পোশাক শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও পোশাক শিল্পে যাতে কোন ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি তৈরি করে কেউ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা না করে সেজন্য শিল্প ও থানা পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এমএস