ঢাকা: রোদের তাপে বাসার বাইরে থাকার অবস্থা নেই। আবার বাসার ভেতরে ফ্যান ছাড়া থাকা যায় না। তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। এই সময়ে ব্যবহার বেড়েছে ফ্যান, এসি ও এয়ার কন্ডিশনারের। ফলে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। শেষ এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। এতে লোডশেডিং হচ্ছে। এরফলে ফ্যান, রিচার্জেবল ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার এবং এয়ার কুলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং এলসি খোলার জটিলতার কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা হতাশ।
ঈদের পর থেকে তাপমাত্রা কখনো ৩৫ ডিগ্রি আবার কখনো উঠে যাচ্ছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এমন অসহনীয় তাপমাত্রায় জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন ভিড় বেড়েছে ফ্যান ও এসির দোকানে।
[221898]
ভোক্তারা অসহনীয় গরম থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছেন বলে রাজধানী জুড়ে সমস্ত প্রধান শীতল যন্ত্রের বাজারে ভিড় দেখা যাচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে। রিচার্জেবল ফ্যানের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদুৎ চলে গেলে অন্ধকারচ্ছন্ন থেকে কিছুটা স্বস্তির আশায় অনেকেই রিচার্জেবল ফ্যান, ল্যাম্প এবং আইপিএস কিনছেন।
রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটে দেখা গেছে সম্ভাব্য ক্রেতাদের ভিড়। রিচার্জেবল ফ্যানের ব্যবহার বেড়েছে, কারণ বিদ্যুৎ ছাড়াও কিছু সময়ের জন্য স্বস্তির বাতাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ফ্যান, যেমন ভিশন, ওয়ালটন, ক্লিক, সানকা এবং সিঙ্গার - বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া ছোট ও ট্যাবলেটপ রিচার্জেবল ফ্যানও রয়েছে।
তবে অনেক স্থানীয় কোম্পানিও রিচার্জেবল ফ্যান তৈরি করছে, যার ফলশ্রুতিতে আমদানি করা পণ্যের ওপর দেশের নির্ভরতা কমে যাচ্ছে। তবে কম আমদানিকারক থাকায় বাজারে প্রতিযোগিতা কম।
জানা যায়, গত মার্চ থেকে ফ্যান ও এসির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগানেও টান পড়েছে। ব্র্যান্ডের শপগুলো লোকাল দোকানগুলোতে চাহিদা মতো ফ্যান দিচ্ছে না। এজন্য তাদের নন ব্র্যান্ড ও বিদেশি ফ্যান বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
ফ্যান কিনতে আসা এক ক্রেতা বলছেন, ছোট নন ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর দাম চাইছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত বছর এগুলোর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। গরম বেড়েছে এখন এক ফ্যানে কাজ হয় না। তাই আরেকটি ফ্যান কিনতে এসেছি।
[221894]
আরেকজন ক্রেতা বলেন, ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ১২ ইঞ্চি ফ্যান কোথাও চাইছে ৩ হাাজার ৫০০ টাকা কোথাও ৪ হাজার টাকা। আর একই ব্র্যান্ডের ১৪ ইঞ্চি ফ্যান চাওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, ছোট স্ট্যান্ড (৯-১০ ইঞ্চি) বা টাইফুন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার টাকায়। এছাড়া দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান ১ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
এদিকে ফ্যানের পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে এসির। এসকোয়ার ইলেকট্রনিকসে গিয়ে জানা যায়, এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার টাকায়, দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার টাকায়। ভিশন এসি বিক্রি হচ্ছে ৪৭ হাজার ও দেড় টনের ৬৫ হাজার টাকায়। এছাড়া গ্রী এক টনের ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শোরুমের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার দুই এসির বিক্রি ভালো। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই জানেন না, কী ধরনের এসি কিনতে হবে। এছাড়া এসি ইন্সটেলশন চার্জ ১০ হাজার টাকা। আর ক্রেতাদের জন্য সামান্য ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা আছে।
রাজধানীর শাহ আলী মার্কেটের সামনে অবস্থিত একটি দোকান থেকে রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি করেন সাজিদ হোসেন তিনি বলেন, “পাখার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি অনেক বেড়েছে। আমি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৫০টিরও বেশি বিক্রি করেছি। আমার দোকানে মাত্র ৭-৮টি ফ্যান বাকি আছে।
তিনি বলেন, "আমাদের দাম অন্যান্য দোকানের তুলনায় একটু কম হওয়ায় মানুষ এখানে জড়ো হচ্ছে।" দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, “১২ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যানের দাম ৪ হাজার টাকা, আর ১৪ ইঞ্চি ফ্যানের দাম ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। একটি বড় রিচার্জেবল ফ্যানের দাম ৮০০০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকা।"
সোনালী নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি সাইজের ফ্যানের দাম এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা বেড়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি এবং তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে।”
ব্যবসায়িরা বলছেন, যদি আমরা উচ্চমূল্যে কিনি, তাহলে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করব? কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে। হঠাৎ করে বাড়ানোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে যাদের সামর্থ্য আছে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ইউনিট কিনছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম ২৬ শতাংশ বাড়িয়েছেন। আগে ৫০ হাজার টাকা দামের একটি এসি ইউনিট এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ হাজার টাকায়। ফ্যানের পাশাপাশি বেড়েছে এয়ার কন্ডিশনার ও এয়ার কুলারের দাম। যারা এসি ইউনিটের খরচ বহন করতে অক্ষম তারা এয়ার কুলারের দিকে ঝুঁকছেন।
জানা যায়, অনেক ক্রেতা ৯ হাজার ৫০০ টাকায় পাখা বিক্রি করছেন, যার দাম কয়েক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০০০ থেকে ৮০০০ টাকা। আগে ৩০০০ টাকা দামের ফ্যান এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০০-৫০০০ টাকায়, যেখানে আগে ৪০০০-৫০০০ টাকা দামের ফ্যান এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০০ থেকে ৮০০০ টাকায়।
[221884]
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এজন্য দুষছেন আমদানিকারকদের। তাদের দাবি, ঈদের আগেও চার্জার ফ্যানের বাজার স্থির ছিল। দুই-তিন দিন আগে হঠাৎ করে দাম বাড়ান আমদানিকারকরা। দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই, বরং কোনো ফ্যানের মান খারাপ হলেও সেটি ফেরত নিচ্ছেন না তারা। গত দুই দিনে কোনো কোনো ফ্যানে দাম বেড়েছে হাজার টাকার বেশি।
চীন থেকে যারা এসব ফ্যান আমদানি করেন, তাদের বেশিরভাগই নবাবপুরের মোজাম্মেল অ্যান্ড রুহুল আমিন ইলেকট্রিক মার্কেটের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, এই মার্কেটে তিনজন শীর্ষ আমদানিকারক আছেন। তাদের ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ হয়। গরমের তীব্রতা বাড়ায় গত দুই-তিন দিনে সব ধরনের চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়েছেন তারা। এমনও ঘটেছে, সকালে একটি চার্জার ফ্যানের পাইকারি দর ছিল ৩ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু একই ভাউচার নিয়ে সন্ধ্যায় ফ্যান আনতে গেলে ওই দরে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি ফ্যানে অতিরিক্ত ২০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘এখন তো ঢাকায় লোডশেডিং নেই। গরমের কারণে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো অন্যায়। ভোক্তা অধিদপ্তর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে আমাদের আপত্তি নেই।’
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন, নবাবপুরের সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিপক্ষে। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
এএইচ/এসআই