‘কালোটাকার মালিকরা পেলেন পুরস্কার আর সৎ করদাতারা তিরস্কার’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৪, ০২:২০ পিএম

ঢাকা : ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করতে ১৫ শতাংশ এবং বৈধ আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ করারোপের ফলে সৎ করদাতাদের তিরস্কার আর কালোটাকার মালিকদের পুরস্কার দেয়া হয়েছে। 

শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী সিপিডির পর্যালোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে স্বস্তি দিতে বিশাল বাজেটে না গিয়ে সংযত বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। যা প্রশংসনীয়। তবে গত দুই বছর ধরে ৯ শতাংশের উপরে থাকা মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।

 এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপ করার উদ্যোগকে ভালো উদাহরণ উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন জানান, তবে মন্ত্রী এমপিদের করমুক্ত গাড়ি পাওয়ার যে আইন রয়েছে সে আইন পরিবর্তন করতে হবে। তাদের কিছু পরিমাণ হলেও কর দেয়া উচিত।

 আর প্রশ্নোত্তর পর্বে সিপিডির বিশেষ ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্ট বলা হয়েছে দুর্বৃত্তায়ন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকবে সরকার। কিন্তু বাজেটে কর ও ঋণ খেলাপিসহ দুষ্টচক্রকে মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের টাকা অর্থনীতিতে আনার প্রচেষ্টায় কর হার কমানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

[225121]

এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ফাহমিদা খাতুন বলেছিলেন, নতুন বাজেট অর্থনীতির ক্রান্তিকালীন সঙ্কট নিরসনে যথোপযুক্ত নয়। 

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেটটি হলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই বাজেট অনেক উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও সাহসী কিছু পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিংয়ের সময় গতানুগতিক বাজেট সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। কিন্তু নতুন বাজেট আমাদের কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, অর্থনীতিতে ক্রান্তিকালীন সঙ্কট ইত্যাদির সমাধানে এই বাজেট যথোপযুক্ত পদক্ষেপ বা দিক-নির্দেশনা দিতে পারেনি।

১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এর মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল আমরা দেখি না। একেবারে কালো টাকা সাদা করার জোয়ার এসেছে বা প্রচুর টাকা এসেছে, এমন কিছু দেখা যায় না।

এ সময় তিনি বাজেটে বিভিন্ন সূচকে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবসম্মত কিনা বলেও প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা, বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা এরকম সবগুলো ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এগুলোতে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই। মনে হচ্ছে অনেকটাই আইএমএফ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিয়েছে, সেটার কাছাকাছি নেয়ার একটা চেষ্টা। এখানে যৌক্তিক কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বেশ কিছু পণ্যের ওপর সরকার কিছু কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে, এটা ভালো প্রস্তাব। তবে দেখার বিষয় হলো, এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হয়। কারণ দেখা যায় কর কমালেও বাজারে সেটার প্রভাব পড়ে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিংটা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, সরকারি কর্মকর্তাদের-কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ, কৃষি খাতের ভর্তুকি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এটাকে বড় বরাদ্দ দেখা যায়। এগুলো বাদ দিলে দেখা যায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি।

এমটিআই