ঢাকা: ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৩ গ্রাহকের পলিসি তামাদি হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট তামাদি পলিসির সংখ্যা ছিলো ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫টি।
গত ১২ ও ১৩ জুন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) তামাদি পলিসির অনিরীক্ষিত এই হিসাব প্রকাশ করেছে।
৩৫টি কোম্পানির মধ্যে আলোচ্য ৩ মাসে আকিজ তাকাফুল লাইফের এক হাজার ১২১টি, আলফা ইসলামী লাইফের ৮ হাজার ৫৯৩টি, আস্থা লাইফের ৮৮১টি, বায়রা লাইফের ৩৬৯টি, বেস্ট লাইফের এক হাজার ৯৮৫টি, বেঙ্গল ইসলামি লাইফের ২ হাজার ৮৯১টি, চার্টার্ড লাইফের ৫ হাজার ১২৭টি, ডায়মন্ড লাইফের ৮৪১টি, ডেল্টা লাইফের ৫৭ হাজার ৯৮১টি, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৪ হাজার ৫৪৯টি, গোল্ডেন লাইফের ৫ হাজার ২৮২টি, গার্ডিয়ান লাইফের ৩ হাজার ৯৯২টি, হোমল্যান্ড লাইফের ৯ হাজার ৩৬৩টি, যমুনা লাইফের ২৩৭টি, জীবন বীমা করপোরেশনের ৮ হাজার ৬২৪টি, এলআইসি বাংলাদেশের ৫৩১টি, মেঘনা লাইফের ৪ হাজার ৭৯০টি।
এছাড়াও মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের ১৫৬টি,মেটলাইফের ১৮ হাজার ৩০টি, ন্যাশনাল লাইফের ৩১ হাজার ৬৬৭টি, এনআরবি ইসলামিক লাইফের এক হাজার ৬৯৩টি,পদ্মা ইসলামী লাইফের এক হাজার ৫৫৫টি, পপুলার ৩০ হাজার ৯৫৯টি, প্রগতি লাইফের ১৮ হাজার ৪৩৭টি, প্রাইম ইসলামী লাইফের ২৯ হাজার ৩৯৩টি, প্রোগ্রেসিভ লাইফের ২ হাজার ৮৬২টি, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফের এক হাজার ২৯৭টি, রূপালী লাইফের ৮ হাজার ৭৪৯টি, সন্ধানী লাইফের ৮ হাজার ২৭৫টি, সোনালী লাইফের ৬৭ হাজার ৫৫৫টি, সানলাইফের এক হাজার ৭৩টি, স্বদেশ লাইফের ৯ হাজার ৮৫০টি, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ৫ হাজার ৯৩৮টি এবং জেনিথ ইসলামী লাইফের ৪ হাজার ৫৩৫টি পলিসি তামাদি হয়েছে।
পলিসি তামাদি হওয়ার কারণ হিসেবে বীমা কোম্পানিগুলো বলছে- দ্বিতীয় বর্ষ থেকে কমিশন হার কম হওয়ায় গ্রাহকের নিকট এজেন্টদের না যাওয়া, গ্রাহকের নিকট ভুল তথ্য প্রদান, প্রিমিয়াম প্রদানে গ্রাহকের অনিহা, এজেন্টদের যোগ্যতার অভাব ও কোম্পানি পরিবর্তন, বীমার সুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং গ্রাহকের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে বীমা পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয়েছে সোনালী লাইফের। এই কোম্পানিটির তামাদি পলিসির পরিমান ৬৭ হাজার ৫৫৫টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ, কোম্পানিটির ৫৭ হাজার ৯৮১টি বীমা পলিসি তামাদি হয়েছে। এছাড়াও ন্যাশনাল লাইফের ৩১ হাজার ৬৬৭টি পলিসি তামাদি হয়েছে এ বছরের শুরুতে।
এ সময়ে সবচেয়ে কম পলিসি তামাদি হয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের, ১৫৬টি।
২০২৩ সালেও সর্বোচ্চ পলিসি তামাদি হয় সোনালী লাইফের, ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫২২টি। গেলো বছর ডেল্টা লাইফের ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৯টি পলিসি তামাদি হয়। এ ছাড়াও পপুলার লাইফের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭১২টি এবং ন্যাশনাল লাইফের ১ লাখ ৫১ হাজার ৪০৫টি পলিসি তামাদি হয় ২০২৩ সালে।
সাধারণত বীমা গ্রাহক তার পলিসির অনুকুলে প্রিমিয়ামের কিস্তি প্রদানের নির্দিষ্ট তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেস পিরিয়ড বা অনুগ্রহকাল হিসেবে ৩০ দিন অতিরিক্ত সময় পেয়ে থাকেন। এই অনুগ্রহকালের মধ্যে যদি বীমা গ্রাহকের মৃত্যু হয়, তাহলেও বীমাটি কার্যকর বলে গণ্য হবে এবং পলিসির নমিনি বা ওয়ারিশরা বীমার প্রদেয় সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
তবে অনুগ্রহকালের মধ্যে প্রিমিয়ামের অর্থ জমা দেয়া না হলে ‘বিচ্যুতি’ ঘটেছে বলে বিবেচিত হবে। দু’বছর নিয়মিত প্রিমিয়াম দেয়ার পূর্বে অনুরূপ ‘বিচ্যুতি’ ঘটলে সংশ্লিষ্ট তারিখ হতে বীমা পলিসিটি অচল ও তামাদি হয়েছে বলে গণ্য হবে। পলিসি তামাদি অবস্থায় গ্রাহকের মৃত্যু হলে পলিসির নমিনি বা ওয়ারিশরা বীমার প্রদেয় সুবিধা পাবেন না।
পলিসি তামাদি হলে বীমা গ্রাহক আর্থিক ক্ষতির সম্মখীন হয়। কেননা, পলিসি তামাদি হলে আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকাও ফেরত দেয়া যায় না। আবার বিশেষ ক্ষেত্রে জমাকৃত প্রিমিয়ামের আংশিক ফেরত দেয়া গেলেও তা পরিমাণে অত্যন্ত কম।
এ ছাড়াও পলিসি তামাদি হলে বীমা গ্রাহকের জীবন বীমাবৃত থাকে না। ফলে পলিসি তামাদি অবস্থায় বীমা গ্রাহকের অকাল মৃত্যু ঘটলে তার নমিনী বীমার কোন সুবিধা পায় না। ফলে বীমা গ্রাহকের নমিনী তথা পরিবার এক অনাগত, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হয়। একইসঙ্গে এটা বীমা শিল্পের প্রতি গ্রাহকদের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরী করে।
এএইচ/আইএ