তিন মাসে বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন

রিজার্ভ না বাড়লে চাপে পড়বে সরকার

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

ঢাকা : বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যেই ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত জুনে দেশের বিদেশি ঋণ ১০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

গত বছর ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছিল। এরপর চলতি বছর মার্চে তা সামান্য কমলেও তিন মাসের ব্যবধানে সব রেকর্ড ভেঙেছে।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বিদেশি ঋণ এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না থাকলেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা না বাড়ায় বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে বাংলাদেশকে এখন সংকোচনমূলক নীতিতে চলতে হচ্ছে।

[232004]

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে অর্থাৎ চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত মার্চ প্রান্তিকে ছিল ৯৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেরই বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এ সময় সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৩২১ কোটি ডলার, যা গত মার্চে ছিল ৭৯ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। সে হিসেবে তিন মাসে ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বর মাস শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বা ৭ হাজার ৯৬৯ কোটি ডলার। গত বছর জুনে ছিল ৭৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া সরকারের পাশাপাশি অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর ঋণের পরিমাণও বেড়েছে গত তিন মাসে। জুন শেষে সরকারের সরাসরি নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ বিলিয়ন, যা গত মার্চে ছিল ৬৭ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। আর জুন শেষে সরকারি অন্য সংস্থাগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন, যা গত মার্চের চেয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেশি।

[232329]

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ওপর যেসব ঋণ করা হয়েছে, আগামী এক-দুই বছর পর পরিশোধের চাপ বাড়বে।

এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা বাণিজ্যিক বলা যায়, কারণ এসব ঋণের সুদহার বেশি এবং পরিশোধের সময়ও কম।

যদিও আমাদের জিডিপি ও বিদেশি ঋণের অনুপাত খুব বেশি নয়, কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, পরিশোধ করার জন্য যে বিদেশি মুদ্রার দরকার, সেটার সংস্থান একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আমাদের রিজার্ভ খুব একটা বাড়ছে না, রপ্তানি আয়ও তেমন বাড়ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের বিদেশি ঋণের দায়ভার আরও বেড়ে যাবে।

সে ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা অর্জন যদি বেশি না হয়, রপ্তানি আয় দ্রুত না বাড়ে তবে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই নতুন সরকারকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে।’

অন্যদিকে সরকারি ঋণের তুলনায় বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কম। চলতি বছর জুন শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত মার্চ শেষে ছিল ২০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

সে হিসেবে বেসরকারি খাতে সামান্য কিছু বেড়েছে।

তবে মার্চের তুলনায় বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ সামান্য বাড়লেও গত বছর জুনের তুলনায় অনেকটা কমেছে। গত বছর জুনে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ছিল ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

মূলত বিশ্বব্যাপী সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। একই সময়ে দেশে বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে ঋণ পরিশোধও অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এ কারণেই বেসরকারি খাত বিদেশি ঋণ গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, জুনে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত মার্চে ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। এসব ঋণের মধ্যে বাণিজ্যিক ঋণের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন। বাণিজ্যিক ঋণের বেশিরভাগ বায়ার্স ক্রেডিট, যার পরিমাণ প্রায় ৫৭৬ কোটি ডলার।

এ ছাড়া বিদেশি ব্যাক টু ব্যাক এলসির ঋণ রয়েছে প্রায় ১০৯ কোটি ডলার। আর ডেফার্ড পেমেন্টের ঋণ রয়েছে ৭৬ কোটি ডলার। তবে জুনে বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সামান্য কমে ৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘মূলত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে। আমরা মূলত স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণগুলো তদারকি করি।

বেসরকারি ঋণগুলো যেহেতু ব্যাংকগুলোই শোধ করে, সাধারণত মাসে ১ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন দুশ্চিন্তা থাকে না।’

এমটিআই