ঢাকা : স্বল্প আয়ের মানুষের পুষ্টির বড় অংশ পূরণ করে মুরগির ডিম। দামের দিক থেকে মাছ-মাংসের চেয়ে অনেকটা সহজলভ্য থাকলেও গেল দুবছর ধরে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হলেও অসাধু ব্যবসায়ী, করপোরেট ও ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ডিমের উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিস। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৮০৯ কোটি ৬০ লাখ পিস। এ হিসাবে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকছে ৩০ শতাংশ। অথচ ব্যবসায়ীরা উৎপাদনের সংকট দেখিয়ে গেল দুবছর ধরেই ডিমের দাম বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করতে করপোরেট কোম্পানির পাশাপাশি ফড়িয়া সিন্ডিকেটের অন্তত ৬০ জন সদস্য সক্রিয় ছিলেন। মূলত তারাই ডিমের বাজার বেসামাল করে তোলেন।
[241576]
জানা গেছে, ফড়িয়া সিন্ডিকেটের ৬০ সদস্যদের মধ্যে চট্টগ্রামের ১১ জন, নারায়ণগঞ্জের ৫, মুন্সীগঞ্জের ৪, চাঁদপুরের ২, মাওনা ৫, গাজীপুর ৮, ময়মনসিংহের ১০, টাঙ্গাইলের ৫ ও ঢাকার ১০ জন ব্যবসায়ী জড়িত। এসব সদস্য যখনই সক্রিয় হয় তখনই বাজারে সংকট দেখা দেয়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রির করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরেও দেশের সব থেকে বেশি ডিম উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় সক্রিয় ফড়িয়া সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মূলত ডিম উৎপাদনের শীর্ষস্থানীয় গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামের ফড়িয়াদের খুদেবার্তায় ডিমের দাম বেড়ে যায়।
দেশের বাজারে গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডিমের দামে রেকর্ড গড়েছে। প্রতি ডজন ডিম ১৮০ টাকায় কিনতে হয়েছিল ভোক্তাদের। ডিমের দাম কমাতে সরকার গত ১৯ নভেম্বর প্রায় ১৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়। এতে বাজারে ডিমের দামে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। প্রকারভেদে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[241575]
তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ী এবং ফড়িয়া সিন্ডিকেটকে কঠিন নজরদারিতে রাখার কথা বলছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। যাতে উৎপাদনকারী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ভোক্তাপর্যায়ে ভোগান্তি না বাড়াতে পারেন এসব ডিম সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এ বিষয়ে রাজধানীর ডিমের বড় পাইকারি বাজার তেজগাঁও ডিমের আড়ত মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, দেশব্যাপী ডিম সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যরা রয়েছেন। তারাই মূলত ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে।
প্রথমত খামারিদের থেকে স্বল্প দামে ডিম ক্রয় করে হিমাগারে মজুদ করে বাজারে চাপ সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় ধাপে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে খামারিদের থেকে কৌশলে তারা ডিম সংগ্রহ করে নেয়।
241570]
তৃতীয় ধাপে এসব ডিম রাজধানীর ১০ পয়েন্টে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশের বড় পাইকারি ডিমের আড়তগুলোয় যেমন ডিমের সংকট পড়ে, তেমনি দৈনিক চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিম সরবরাহ হয়ে থাকে। এতে করে বাজারে হাহাকার সৃষ্টি হয়।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ডিমের বাজারে যে কারসাজি চলছে তা বন্ধ করতে হলে প্রথমে গঞ্জের খামারিদের টিকে থাকার সঙ্গী হতে হবে সরকারকে। আর তারা একবার সক্রিয় হয়ে গেলে বাজারের সিন্ডিকেট সদস্যরা নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে পড়বেন।
এমটিআই