চাল আমদানির প্রভাব নেই খুচরা বাজারে, কৃত্রিম সঙ্কট তেলের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
চাল আমদানির প্রভাব নেই খুচরা বাজারে, কৃত্রিম সঙ্কট তেলের
ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশে টনে টনে চাল আমদানি করলেও দামে নেই স্বস্তি। ভারত থেকে বেসরকারিভাবে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত দুই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হলেও এর কোনো প্রভাব নেই রাজধানীর খুচরা বাজারে। দাম না কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ভোক্তারা। 

এদিকে রমজানকে সামনে রেখে তেলের বাজারে সঙ্কট জিইয়ে রেখেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি সঙ্কট রয়েছে তেলেও। তবে স্থিতিশীল রয়েছে শীতকালীন সবজির বাজার। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ টাকার নিচে ভালো মানের কোনো চাল বাজারে নেই। সর্বনিম্ন গুটি স্বর্ণ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায়। যা আকারে মোটা হওয়ায় খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

অন্যদিকে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ভালো মানের মিনিকেট ৮৪/৮৫, আটাশ প্রতি কেজির মূল্য ৬৫ টাকা, নাজিরশাল ৮০-৮৫, বাসমতী ৯৫ থেকে ১০০, চিনি গুড়া ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। 
 
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের চালের অভাব নেই কিন্তু দাম বাড়ার কারণও আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশিতেই বিক্রি করি। যারা আমদানি করেন তাদেরই কারসাজি দাম বৃদ্ধির পেছনে। হাজার হাজার চালের বস্তা তারা মজুদ করে রেখে দাম বৃদ্ধি করেন। সরকার ভালো করে দেখভাল করলে দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

গত ৬ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞাপ্তিতে জানানো হয়, ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত চাল আমদানি করতে পারবেন।

এর আগে, গেল বছর দুই দফায় আমদানি করা চাল থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুরুতে চালের দাম কমাতে ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল আমদানি শুল্ক। এতে ফল আশানুরূপ না পেয়ে গত বছরের (১ নভেম্বর) চালের ওপর থাকা সকল আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় এনবিআর। এই সিদ্ধান্তের ফলে চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৯.৬০ টাকা কমবে বলে আশা করা হলেও উল্টো বেড়েছে দাম।

বাজার করতে আসা আলতাব নামে এক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলাম ইউনুস সরকারের আমলে চাল, মাছ ও মাংসের দাম আমাদের মতো মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে। কিন্তু তা আর হলো কই? আগের মতোই দাম শুধু বাড়ার দিকেই আছে। শুনেছি সরকার চালের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করেছে, তাও তো সেই একই দাম। তাহলে ভ্যাট বাতিল করে লাভ হলো কি? সিন্ডিকেট না সরাতে পারলে এদেশের মানুষের শান্তি হবে না।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে কতৃপক্ষ সেখানে গেলেও চালের বাজারে কেউ যায় না। আপনি শুল্ক প্রত্যাহার করলেন কিন্তু কে কিভাবে চাল বিক্রি করছে এটার খবর কেউ নিচ্ছেন না। তদারকি না করলে দাম কমবে কিভাবে? এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করছে। দুই দফায় সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করেছে তারপরও যত দিন যাচ্ছে তত ১ টাকা ২ টাকা করে চালের দাম বেড়েই চলেছে। যেহেতু তাদেরকে বলার মতো কেউ নাই এই কারণে তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সবজির বাজারে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো, বাঁধা কপি ও ফুলকপি ৩০, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০, চিচিঙ্গা ৭০, বেগুন ৫০-৬০, কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ৫০, পালংশাক, লাল শাক, পেঁয়াজের কালি প্রতি আটি ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

গত সপ্তাহের তুলনায় মানভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা। ৩০-৩৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। এছাড়া প্রতি কেজি পেয়াজের মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে এসব পণ্যের বাজার ভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে। 

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা। ২১০ টাকার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ৩৪০-৩৫০ টাকার সোনালি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৪০ টাকায়। ৮০ টাকার হাঁসের ডিমের হালিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির ডিম, প্রতি হালির দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫ কেজি ওজনের রুই ৫০০ টাকা কেজি, ছোট রুই ২৫০, পাবদা আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৭০০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ ও জাটকা ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মূল্য ১১০০ থেকে ১১৫০, গরুর মাংস ৭৫০ এবং হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৯৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, তেল নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ‘তেলেসমাতির’ ফলে আবারও সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে রমজানকে লক্ষ্য করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে, সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে, সংকট জিইয়ে রেখেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে বারবার তাদের দাবি আদায় করে নেন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহায় দিয়ে যে হারে দাম বাড়ান, সেই হারে কখনো দেশের বাজারে তেলের দাম কমান না। তাছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বছরের পর বছর জিম্মি করে ভোক্তার পকেট লুটেন মুনফাখোর ব্যবসায়ী।

আরিফ নামে এক মুদি দোকানদার বলেন, তেলের দাম একই আছে, শুধু তেল নেই। সামনে রমজানকে লক্ষ্য করে বড় ব্যাবসায়ীদের দাম বাড়ানোর একটা ফন্দি। ফলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে খুচরা বাজারে। 

বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৬০ টাকায়।

এসআই