কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম

ঢাকা : ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে নগদ টাকা। এরফলে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বিত্তশালীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা তিন মাসে ৪ হাজার ৯৫৪টি বেড়েছে। বর্তমানে এমন মোট হিসাব আছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী অর্থপাচার করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা করছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে।

[245847]

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে ব্যাংক খাতের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি। আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে— এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা তিন মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। সেই হিসেবে তিন মাসে কোটি টাকার উপরে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪টি। এর আগে গত বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অর্থ পাচার কমেছে অন্যদিকে উচ্চ মুনাফার অর্থ ব্যাংকে রাখছে। এর ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

[245846]

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থারও কোটি টাকার হিসাব রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

[245838]

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। 

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। গত বছরের জুনে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে, সেপ্টেম্বরে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে এবং ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে।

এমটিআই