শিল্পে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানির দর নির্ধারণের আহ্বান বিদেশী বিনিয়োগকারিদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০২:৪২ পিএম
শিল্পে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানির দর নির্ধারণের আহ্বান বিদেশী বিনিয়োগকারিদের

ঢাকা : বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।

নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

সরকারের টেকসই ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানালেও বিইআরসি ঘোষিত প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহারের ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারন চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। বিইআরসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যমান গ্রাহকদের চেয়ে নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত-মূল্য নীতি কেবল ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে লঙ্ঘন করে না বরং প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।

[247579]

ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের যে মডেলটি বিইআরসি ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন এবং এর কারনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা আলাদা  জ্বালানি খরচের কারনে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এধরনের মূল্য কাঠামো সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থী। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন শুধুমাত্র নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরন। এধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে একটি স্বচ্ছ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ  জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ কাঠামো আবশ্যক। আমরা  জ্বালানির চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনঃবিবেচনা করার আহবান জানাচ্ছি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বৃহৎ লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি নির্ধারণে দাবী জানাই।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, নতুন ঘোষণা অনুযায়ী নতুন যে কোন নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট নতুন কানেকশন হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের স্ল্যাবে ফেলতে পারবে। এ ধরনের বিধান শুধুমাত্র অযৌক্তিক ও অন্যায্যই নয় বরং নিয়ন্ত্রকদের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি করে দেয় যার মাধ্যমে তারা আগের চুক্তি জোরপূর্বক বাতিল করে নতুন চুক্তি সই এ বাধ্য করার মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফ আরোপ করতে পারে। এ ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে।

[247574]

ফেব্রয়ারি মাসের ২৬ তারিখে বিইআরসি গ্যাস ট্যারিফ পুনঃনির্ধারণের জন্য একটি গণশুনানীর আয়োজন করেছিল, যেখানে উপস্থিত সকলে এর বিরোধিতা করেছিল। সংগঠনটি দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারী সহ সকল অংশীদারদের সাথে সেই আলোচনা পুনরায় চালু করার দাবী জানিয়েছে এবং এর মাধ্যমে যে সংস্কার আসবে তার মাধ্যমেই কেবল শিল্প খাতে একটি টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মতামত দিয়েছে।

বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ,  জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এই ধরনের বৈষম্যমূল্যক মূল্যহার অতিসত্তর পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এই সংগঠন। সেই সাথে এই ধরনের জরুরী সংস্কারের পূর্বে সম্পৃক্ত সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করার আহবান জানানো হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে  জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই শিল্প প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার ব্যপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংগঠনটি আশা করে বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে সহায়ক  জ্বালানি মূল্য ঘোষণা করবে।

এমটিআই