মাত্র কয়েকদিন আগে রাজধানীর দক্ষিণখানের পূর্ব আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় আত্মঘাতী গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। নারীটি হলো পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী সাকিনা এবং ১৪ বছর বয়সী ছেলেটি জঙ্গি নেতা তানভীর কাদেরীর সন্তান। এ ছাড়া বিস্ফোরণের সময় স্পিন্টারের আঘাতে আহত হয়েছে সাবিনা নামের এক শিশু। অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা নিহত জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার বিমলা ও তার মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মূসার স্ত্রী তৃষা ও তার মেয়ে। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর আশকোনার জঙ্গি আস্তানা ধ্বংসের আগে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জেও জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে পুলিশী অভিযানে গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীসহ ৩ জন নিহত হয়। ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ। অপরদিকে, ১৩ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি ভাড়া করা বাসায় পুলিশের অভিযানের সময় নিহত হয় তানভির কাদেরী। সেখান থেকে জাহিদুলের স্ত্রী ও তার মেয়ে আগেই সরে পড়ে। তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুন ফাতেমাসহ ১৪ বছরের যমজ ছেলের একজন, গুলশান হামলার আরেক সমন্বয়ক মারজানের স্ত্রী আফরিন আক্তার ও জঙ্গি বাশারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন গ্রেফতার হয়। সেখানে তানভীরের আরেক ছেলে ছিল না।
চলতি বছরের ১ জুলাই ৯ হামলাকারী গুলশানের অভিজাত এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা, বিদেশিসহ মোট ২৮ জন নিহত হন। এটাই ছিল দেশে স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। ২০১৩ সাল থেকেই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক এবং মুক্তমনা মানুষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে দেশে এ ধরনের প্রায় ৩০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম থেকেই জঙ্গি হামলাকারীদের দমনে ব্যবস্থা নিতে সরকার ছিল জিরো টলারেন্সে। সরকারের এই কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দমনে সাফল্য আসছিল। সেপ্টেম্বরে আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানা ধ্বংসের পর কয়েকমাস পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছিলো। কিন্তু শুক্রবার রাতে ঢাকার আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালিত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটা জিনিস স্পষ্ট হলো, জঙ্গিরা একেবারে নির্মূল হয়ে যায়নি।
যারা দেশে জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে তারা কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের লোক নয়। তাদের ক্রিয়াকাণ্ড পুরোটাই অবৈধ। যারা অবৈধভাবে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে তাদের অবশ্যই কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলো যথাযথ। আমরা চাই দেশে শেষ জঙ্গিটি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই