আশুলিয়ায় বন্ধ পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্দেশে গত সোমবার সকাল থেকে সব বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া হয়। বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে সৃষ্ট শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে একই দিনে বন্ধ করে দেয়া হয় আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা। বন্ধের পাঁচ দিন পর খুলে দেয়ায় সন্তোষ এবং শ্রমিক-মালিকদের অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এদিকে আশুলিয়ার যেকোনো এলাকায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিটি কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে।
রবিবার সন্ধ্যায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কয়েকজন মন্ত্রীর বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে কারখানা খোলার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়। কারখানা খুলে দেয়ায় আপাতত সব অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টশিল্পে কারখানার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে আনুমানিক ৩৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেক বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এই খাত। বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টশিল্পকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র লক্ষ করা গেছে। গার্মেন্ট খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার হঠাৎ করেই ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে ধর্মঘট শুরু হয়; যদিও শ্রমিক সংগঠনগুলো এই শ্রমিক অসন্তোষ ও ধর্মঘটের দায় নিতে অস্বীকার করে। সন্দেহ করা যেতে পারে, উদীয়মান গার্মেন্টশিল্প ধ্বংসের পরিকল্পনা থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যেখানে কারখানা থাকবে, শ্রমিক থাকবে, সেখানে আন্দোলন-সংগ্রাম থাকাটাই স্বাভাবিক।
শ্রমিক আন্দোলনেরও নিয়মনীতি আছে। হুট করে ধর্মঘট ডেকে শ্রমিক আন্দোলন সফল করা যায় না। উৎপাদন বন্ধ রেখে দাবি আদায় করার পন্থা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টশিল্পের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানাতে হলে নিয়ম মেনেই তা করতে হবে। এখানে সে নিয়ম মানা হয়নি। মনে রাখতে হবে, উন্নয়নের স্বার্থেই শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক সহযোগিতামূলক হতে হবে। কারখানার সঙ্গে একা হতে না পারলে কারখানার উন্নতি হবে না। কারখানা মালিকদেরও শ্রমিকদের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। ক্রেতাদের চাপে কারখানার কর্মপরিবেশ বদলাতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার মানও নিশ্চিতভাবেই বদলে যাবে। এ জন্য সময় দিতে হবে। মালিকদেরও মনে রাখতে হবে, বর্তমান বাজারমূল্যে যে মজুরি শ্রমিকদের দেয়া হচ্ছে তা আদৌ যৌক্তিক কি না। অনেক কারখানা নিয়ম মেনে ও নির্দিষ্ট সময়ে বেতন দেয় না। ফলে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সব সমস্যার যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আশুলিয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইন্ধন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি না হয় এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আশা করি, একটি বিকাশমান শিল্পের ক্রম উন্নতিতে মালিক-শ্রমিকের যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রয়োজন, তেমনি করে কাজের পরিবেশও বজায় রাখতে হবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা