আজ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হতে যাচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ঘটনাবহুল একটি বছর। সময় তার নিজস্ব নিয়মেই এগিয়ে যাবে এটিই স্বাভাবিক। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ার একটি বছর। এ বছর নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিষত ঘটনা কেন্দ্র করে মানুষের জীবনযাপনে ভয়ঙ্কর রকমের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল- বিদেশি নাগরিক হত্যা ও দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নাশকতা। আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আদালতের দণ্ড কার্যকর, স্বল্পতম সময়ে কয়েকটি মামলার রায় কার্যকরে জনগণ উৎফুল্ল। ২০১৬ সাল ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সাফল্যের একটি বছর। এ বছর নিম্নমধ্য আয়বলয়ে উত্তরণ, নিজস্ব অর্থায়নে বৃহত্তম অবকাঠামোগত প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের সূচনা অগ্রগতি, সার্বিক অর্থে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণের ইঙ্গিতবাহী। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে গত বছরের চেয়ে এ বছর ছিল অনেকটাই স্থিতিশীল। তবে অনেক গুণী ব্যক্তিত্বও এ বছর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে দেশে জঙ্গি উত্থানের বিষয়টি দেশবাসীকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে।
এ বছর আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংগঠনের জরিপে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ শর্ত পূরণ ছিল বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অনেক রাষ্ট্রের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে সক্ষম হয়। এ বছর সবচেয়ে বেশি সাফল্য পরিলক্ষিত হয় শিক্ষা খাতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যও ছিল এ বছর অনেক বেশি। সাফল্যের পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে বাংলাদেশের। তিস্তাচুক্তি না হওয়া, জঙ্গিদের পুনরুত্থানসহ বেশ কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীকে হতাশ করেছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিকভাবে এ বছর নাশকতার পরিমাণ কম হলেও মানুষের মন থেকে এ আতঙ্ক একেবারে মুছে যায়নি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরও ছিল এ বছরের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে সার্বিক অর্থে বলা যেতে পারে, এ বছর বাংলাদেশের জন্য সাফল্যেরই বছর।
দেশের উন্নয়ন যেমন সাধারণ মানুষকে আশান্বিত ও আপ্লুত করে মানুষের কর্মস্পৃহা বাড়ায়, তেমনই ব্যর্থতাও গ্রাস করে। দেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা না যায়, তা হলে একটি দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা ও সহযোগিতা করেন, সেসব রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। কেননা সাধারণ মানুষের শান্তি ও কল্যাণের জন্য যে রাজনীতি করার কথা, সেখানে রাজনৈতিক মতবিরোধে সাধারণ মানুষই জিম্মি হয়ে পড়লে তার মতো পরিতাপের আর কিছুই হতে পারে না।
আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধশীল হয়ে আসুক এ জাতির জীবনে। রাজনীতিতে এখনো যেটুকু অনিশ্চয়তা রয়েছে, তার অবসান হোক। সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর, অহিংস ও গতিশীল দেশ গড়ে উঠবে এমন আশাই সবার। আর তা বাস্তবায়নে অহিংস ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই