খুন দিয়েই শুরু হলো বাংলাদেশের খ্রিস্টীয় নতুন বছর। তাও আবার সাধারণ কোনো খুন নয়, একজন জাতীয় সংসদ সদস্যকে খুন করা হলো তারই বাসার বৈঠকখানায়। তাও আবার খোদ সরকারি দলের সংসদ সদস্য। এই খুনে দেশের মানুষ হতবাক। সরকারও এই হত্যায় নতুন কোনো ইঙ্গিত খুঁজতে শুরু করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
অন্যদিকে খুলনায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মারা যান পথচলতি এক নারী। সংগত কারণেই এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। বিশেষ করে এমপি লিটনকে হত্যার ঘটনায় শাসক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও হতবাক। সরকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হচ্ছে, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে, তখন একের পর এক হত্যাকাণ্ডে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
গত বছর দেশে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো সর্বোচ্চপর্যায়ের আলোচনায় ছিল। তবে জঙ্গি দমনে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তৎপরতাও ছিল উল্লেখ করার মতো। সরকার শুরু থেকেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থাকলেও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। দুর্বৃত্তরা যখন সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্যকে বাসায় ঢুকে গুলি করে হত্যা করতে পারে, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই সামনে চলে আসে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, শনিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা তিন যুবকের দুজন এমপি লিটনের সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাড়িতে ঢোকার পরপরই তিনটি গুলির আওয়াজ শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুলির ঘটনায় আহত সংসদ সদস্যকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ধারণা, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে হত্যা করা হতে পারে। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় জামায়াত অথবা উগ্রপন্থিদের সন্দেহ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি আশা করা যায় না। পুলিশ প্রোটেকশন থাকা সত্ত্বেও একজন সংসদ সদস্যকে বাসায় ঢুকে কীভাবে হত্যা করতে পারে দুর্বৃত্তরা, তা সত্যিই বিস্ময়ের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে এমপি লিটনের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ অত্যন্ত ইতিবাচক। পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আরও বেশি নজর দেয়া উচিত। অপরাধীদের সাজা হলে খুন-খারাবির ব্যাপকতা কমে আসত, এমন মন্তব্য অনেকবারই করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাস্তবতা হলো- আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতাও অস্বীকার করা যাবে না। তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে নজর দেয়া। যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে না তাদের।
এ বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। সুন্দরগঞ্জে যেভাবে বাড়িতে ঢুকে একজন সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা, তাতে ঘরের ভেতরেও মানুষের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। আমরা মনে করি, হত্যাকারী যে বা যারাই হোক, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে সে পরিস্থিতি কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই