ঢাকা: মাধ্যমিক পর্যায়ে বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করে এক মাসের সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। করোনা কারণে বন্ধের সময়টুকুতে শিক্ষার্থীদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে এ মূল্যায়ন। মাধ্যমিকের মতো একই ধরনের মূল্যায়নে যাচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর। সে লক্ষ্যে নিয়ে কাজ শূরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহ এক সংক্রান্ত একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে ১ মাসের মূল্যায়নে কি কি রাখা যায় তা চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদ্য যোগ দেয়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলতি সপ্তাহ একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) তৈরি করা একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বদলে যাচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাব্যবস্থা
নেপ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবার বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষার পরিবর্তে স্ব স্ব স্কুলে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (কন্টিনিউ অ্যাসেসমেন্ট) করার জন্য ৩০ কর্ম দিবসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে নেপ। তবে সেটি নির্ভর করছে স্কুল খোলার উপর। আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। শীতের আগমনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করেছেন প্রধানমন্ত্রীসহ বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে স্কুল খোলার কোন সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে অটোপাস ঘোষণা করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক হতে ব্যাপক সাড়া
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিক (নেপ) মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, আমরা ৩০ কর্ম দিবসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। ১৫ নভেম্বর থেকে স্কুল খুললে সেদিন থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে। বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে স্কুল পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। সংসদ টিভি, রেডিও ছাড়াও স্বস্ব স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এ ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করে ডিপিইতে জমা দেওয়া হয়েছে। স্কুল না খুললে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিবে।
জানা গেছে, নেপ ৩০ দিনের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। সেটি থেকে শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে আমারা সেটি পাঠিয়ে দেবে। এ ধরনের সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে অ্যাসেসমেন্ট করা নির্ভর করছে স্কুল খোলার উপর। স্কুল খোলার সিদ্বান্ত না হলে অ্যাসেসমেন্ট কি হবে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবে মন্ত্রণালয়। তবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বয়স অনেক কম। তাই স্কুল বন্ধ রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করা যৌক্তিক হবে কি না সেটাও ভাবা হচ্ছে। তবে পুরো সিদ্ধান্তটি হবে স্কুল খোলার উপর।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে চলতি সপ্তাহে বৈঠকে। সে পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে বললেন তিনি।
তবে অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, স্কুল খোলা না হলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অটোপাস ঘোষণা করা হবে। এর আগে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকাকালিন একটি পরিকল্পনা করেছিল নেপ। তাতে ১ অক্টোবর স্কুল খুললে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া। সেক্ষেত্রে ৫৭ দিন ক্লাস করার কথা বলা হলেও ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকায় তিন দিন কমবে। ১ নভেম্বর থেকে স্কুল খুললে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া। সেক্ষেত্রে ৪০ দিন ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতী না হওয়ায় এসব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষার্থীদের অটোপাস ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে ৩০ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
সোনালীনিউজ/এইচএন