ঢাকা: নতুন বছরে স্কুল ভর্তি পরীক্ষা হবে নাকি অন্য কোনো উপায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান হচ্ছে। করোনার সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, লটারিও হবে অনলাইনে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা আসছে।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক অনলাইন সভায় এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এ সময় উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়াম্যান মু. জিয়াউল হকসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তিনটি পদ্ধতির বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমত পরীক্ষার বিষয়গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে সীমিতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা। তৃতীয়ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতার কথা তুলে ধরেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তারা জানান, সশরীরে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা নিতে গেলে ঝুঁকি রয়েছে বেশি। কারণ ক্রমেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়ছে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেবে। এতে করে যতই ক্ষুদ্র অংশে বিষয়গুলো ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া হোক না কেন তাতে শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে একই পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সক্ষমতাও এখনো তৈরি হয়নি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। তাছাড়া অনলাইনে একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়ে দেওয়ারও ঝুঁকি থেকে যায়। শুধু তাই নয়, সব শিক্ষার্থীর কাছে ইন্টারনেট এবং ডিভাইস নাও থাকতে পারে। এতে করে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়েই মতামত এসেছে। এ জন্যই আলোচকরা অন্য পদ্ধতির চেয়ে লটারির পদ্ধতিকেই তুলনামূলক যথার্থ বলে মত দিয়েছেন।
লটারি পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে গেলেও সমস্যা রয়েছে, তবে সেই সমস্যাগুলো কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে আলোচনায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষক জানান লটারি পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে গেলে অনেক মেধাবীর বাদ পড়ে যাওয়া এবং অমেধাবীরা ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সঠিক করণীয় কী তা নির্ধারণে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে লটারি পদ্ধতিটিও অনলাইনে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে লটারি করলে ছোট বাচ্চারা বড় ক্লাসে আবেদন করে ফেলতে পারে। এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এমনটা যেন না হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রাখা হবে আবেদনে। শুধু তাই নয়, লটারি পদ্ধতির আবেদনে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদেরকে আবেদন এবং ভর্তির বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরকে উৎসাহিত করা হবে। দূরের শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি না করানোর জন্য উৎসাহিত করা হতে পারে।
এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হবে আগেই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে স্কুল পরিবর্তন এবং যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করায় সে বিষয়েই সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে।
গতকালের এই বৈঠক শেষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসছে।
এদিকে রাজধানীর সেন্ট যোসেফ, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার নোটিস জারি করেছে। করোনার ভেতরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও কেন এসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার নোটিস জারি করেছে? এমন প্রশ্ন অভিভাবকদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) আমাদের আগেই ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল। সেই আলোকেই এ নোটিস দেওয়া হয়েছে। যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসে তাহলে সেটার আলোকেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
এদিকে সৈয়দ জামিলা নামে এক অভিভাবক বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদি অন্যবারের মতো পরীক্ষা নেয় তাহলে তো আমাদের সন্তানদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। স্কুল বন্ধ, অনলাইনে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন কিন্তু নতুন ক্লাসে কীভাবে ভর্তি হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো।
উল্লেখ্য, গত মার্চ থেকে বেশ কয়েক ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এই ছুটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোনালীনিউজ/টিআই