শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০৮:৪০ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা : দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ফেব্রুয়ারিতে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে পরীক্ষা আছে এমন ক্লাসগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে অনলাইনে আয়োজিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে রিকভারি প্ল্যান (ক্ষতি পোষাতে) করা হবে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ দুই মন্ত্রণালয়ের তিনজন সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বৈঠক শেষে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি দুই মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা হবে, কোন শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এর একটি পরিকল্পনা করতে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি সূত্র ইঙ্গিত করেছে, এবার আর ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না। বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিনেই মুখর হতে পারে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা। সেক্ষেত্রে প্রথমে শুরু হবে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আর নতুন করে বাড়ানো নাও হতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হতে পারে। 

এরপর অন্যান্য ক্লাসেও পাঠদান শুরু করার অনুমতি দেওয়া হবে। এজন্য ক্লাস রুটিন তৈরি করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) বলা হয়েছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক এ বিষয়ে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটি আমরা পেয়েছি। তবে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদ্যালয় খোলা হবে কি না এই সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। যদি খোলা হয় তাহলে প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আংশিক আকারে ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করা হবে।

এদিকে শিক্ষাবিদেরা দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করেছে। এ লক্ষ্যে এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন খসড়া প্রতিবেদনে কবে, কখন কীভাবে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আমরা নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে বেধে দিচ্ছি না। সরকারকে সক্ষমতা অর্জন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে। যেন পরবর্তী ধাপে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সবার সুরক্ষা নিশ্চিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দূরশিক্ষণ ব্যবস্থায় শিক্ষা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো শিখতে পারছে না। কিন্তু শহরের শিক্ষার্থীরা এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। এই বৈষম্য কমাতে হলে বিদ্যালয় খুলে দিতে হবে।

এ বিষয়ে এডুকেশন ওয়াচের গবেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। সেই ক্ষেত্রে শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খুলে দেওয়া যেতে পারে। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বড়িয়ে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কওমি ছাড়া) বন্ধ করা হয় আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ে অটোপাস ঘোষণা করা হয়েছে এইচএসসি, জেএসসি, পিইসি ও সমমানের পরীক্ষায়। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে অন্যান্য শেণির শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে টিভিতে শ্রেণি পাঠদান সম্প্রচার করা হচ্ছে। আর উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষাস্তরে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ