ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যাওয়ায় সরকারঘোষিত তারিখে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। গত দু-তিন দিনে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর হার আরো বেড়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা ক্রমেই আরো ক্ষীণ হয়ে আসছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রমও সীমিত রাখতে হবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষাও (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদরাসা, দাখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষে বুধবার (১৭ মার্চ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, যা অত্যন্ত কষ্টের। ছোট্ট সোনামণিদের এটাই বলতে চাই—তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, পড়াশোনা শেখো। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে এবং আমরা তখনই স্কুল খুলে দেব।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ মার্চ আর বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ মে খোলার কথা। হলগুলো খোলার কথা রয়েছে ১৭ মে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কভিডসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ ছিল, করোনার নমুনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে নমুনা শনাক্তের হার ছিল ৩.৩০ শতাংশ, তবে কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। কয়েক দিন ধরে এই হার ঘুরেফিরে ৯ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে। ফলে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা কম। আর সংক্রমণের হার খুব বেশি না বাড়লে শুধু এসএসসি-এইচএসসির পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে। আবার সামনে রমজান মাস। তাই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলেও ঈদের পর অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেই ২৪ মে থেকে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আগামী ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ না খোলার আহ্বান জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। সংগঠনটি গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ অবস্থায় ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। তাই আমরা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই