ঢাকা : করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণের পর থেকে প্রায় দেড় বছরে খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ এই সময়ে প্রায় সব সেক্টরই খোলা ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ কারণে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এদিকে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং পরিকল্পিত উপায়ে টিকা নিশ্চিত করে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
তাদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতদিন বন্ধ রাখা হলেও এখন যেহেতু টিকা চলে এসেছে, তাই পর্যায়ক্রমকে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় এনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করতে হবে। একইসাথে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তা থেকে উত্তরণে পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা বা অনীহার মধ্যে আটকে আছেন। স্কুল খোলা হবে কি না সেটা এক ধরনের বড় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর জীবন সামান্য কারণে থমকে আছে। কারো বা একটামাত্র পরীক্ষা কিংবা অনেকের পরীক্ষা হয়েছে কিন্তু তাদের রেজাল্ট হয়নি। এসব ছোটখাটো বিষয়ের কারণে শিক্ষাজীবন আটকে আছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী যারা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মস্থলে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে বন্ধ থাকার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এসব বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সমাধান করা উচিত। শিক্ষা সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত হিমাগারে রেখে দেওয়া হয়েছে। অন্য সব সেক্টর যেখানে খুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে কেবলমাত্র শিক্ষাকে বন্ধ রাখা কোন ধরনের যুক্তিতে টেকে না। সরকারকে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার বিষয়ে মতো দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের টিকাদানকে সহজ পদ্ধতিতে দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান সম্পন্ন হলে সেটি খুলে দিতে হবে।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় তবে সেটি খুলে দিতে হবে, যাতে তারা লেখাপড়া শুরুর সুযোগ পায়। শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এটি করতে হবে। এভাবে সারা দেশেই করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসাথে খুলতে হবে এমনটি হতে পারে না। একটির জন্য আরেকটির অপেক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান সম্পন্ন হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়টি জাতীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই হবে বলে জানিয়েছেন, উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি জাতীয় এবং সমন্বিত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে গত ১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১৮ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা নিজ নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবেন।’
কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে একদিকে ১৮ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের বিষয়েও বলা হয়েছে। কিন্তু দেশে সাধারণত ১৬ বছর বয়সে এসএসসি এবং ১৮ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ১৮ বছরের বেশি বয়সিরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাই এসব শিক্ষার্থী কীভাবে টিকা গ্রহণ করবেন সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত মোট এক লাখের বেশি আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসে দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকার নিবন্ধনসংক্রান্ত কাজসহ স্বাস্থ্যের তথ্যসংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত এমআইএস। যদিও এই তালিকায় নাম নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের।
কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই