ঢাকা : আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগকে সঙ্গী করে প্রায় দেড় বছর পর আজ রোববার খুলছে স্কুল-কলেজ। এই দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ছিল লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক।
তবে করোনার কারণে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে যে কোনো সময় আবার বন্ধ করে দেওয়ার কথা আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে সরকার।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সংবাদে অভিভাবকদের আনন্দের পেছনে লুকিয়ে আছে অজানা উদ্বেগও। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংবাদে সৃষ্টি হয় এই উদ্বেগ।
গত ২ সেপ্টেম্বর আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ও চিলড্রেনস হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল খুলে দেওয়ার পরের এক সপ্তাহেই দেশটিতে প্রায় আড়াই লাখ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে লাখ লাখ শিশু ক্লাসরুমে ফিরেছে, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে। খবরে আরো বলা হয়েছে, আগস্টেই দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি শিশুরা।
এদিকে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা তুলে ধরে সবাইকে টিকা দিয়ে পরে স্কুল খোলার অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকার বিষয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, ১২ বছর কিংবা এর বেশি বয়সী শিশুদের ফাইজার কিংবা মডার্নার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক গত ৫ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্কুল খোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলামও।
তিনি বলেন, যারা বয়সে একটু বড় তাদের বোঝানো সম্ভব। কিন্তু ছোটদের বোঝানো সম্ভব নয়। তাদের বোঝাতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্কুল সংলগ্ন ফুটপাতগুলোতে ফুচকা বা চায়ের দোকান রাখা যাবে না। কেউ যেন সেখানে আড্ডা না দেয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
মা-বাবাসহ যারা শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসবেন তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিনেটেড হতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল বলেন, একজন মায়ের এতদিন নিজের সন্তানকে সংক্রমিত করার ঝুঁঁকি ছিল। স্কুলে আসলে আরো অনেককে সংক্রমিত করার ঝুঁকি থাকবে। সেই সঙ্গে শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও টিকা নিতে হবে।
বনানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে এমন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক লাবন্য প্রভা বলেন, স্কুল কী ধরনের নিরাপত্তা পদ্ধতি নেবে তা এখনো জানি না। স্কুল থেকেও কিছু বলেনি। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যতটা সচেতন, প্রাথমিকের শিশুরা ততটা নয়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলেই একে অন্যের হাত ধরবে, পাশে বসবে-এটাই রিস্ক ফ্যাক্টর।
গ্রিন রোডের একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মা শেফালি হোসেন বলেন, মেয়ে স্কুলে যাবে, সেই জন্য নতুন জুতো কিনেছেন। স্কুল থেকে তাকে জানানো হয়েছে, একদিনে একই শ্রেণির সব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হবে না।
এ পদ্ধতি তার পছন্দ হয়েছে জানিয়ে শিউলি বলেন, সিস্টেমটা ভালো, তবে শঙ্কা একটু থাকবেই।
স্কুল খোলার পর সংক্রমণ বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও বলেছেন, চালুর পর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার জামালপুর পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে আবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সেখানে পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ করাও হতে পারে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও টিফিনের বিরতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক।
তিনি জানান, স্কুল-কলেজে বসে টিফিন খাওয়া যাবে না। শুধু পানি পান করা যাবে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ পরিদর্শন শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে এ কথা বলেন মাউশি মহাপরিচালক।
সোনালীনিউজ/এমটিআই