৩৫ বছর চাকরি জীবনে একদিনও ছুটি নেননি এই শিক্ষক

  • যশোর প্রতিনিধি: | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১, ০৬:১১ পিএম

ঢাকা: বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ৩৫ বছর চলছে। আর এই ৩৫ বছর শিক্ষকতা জীবনে তিনি এক দিনও ছুটি নেননি। এমনকি নিজের বিয়ে, বাবার মৃত্যুর দিনেও উপস্থিত ছিলেন স্কুলে। শুধু তাই নয় অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল। এমন গুণের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পেয়েছেন ডজনখানেক পুরস্কার।

আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিজীবীদের ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’

ষাট বছর বয়সের এই শিক্ষক বসবাস করেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামে। শিক্ষকতা করেন যশোরের অভয়নগরের ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

জানা যায়, ১৯৮৪ সালে বিএসসি পাস করার দুই বছর পর ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

আরও পড়ুন: এ অর্থবছরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ

একই প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৫ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েও নিয়মিত নবম ও দশম শ্রেণির গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান এবং পদার্থ বিজ্ঞান পড়ান।

৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে ঘটে গেছে কত কিছু? বিয়ে এমনকি বাবার মৃত্যুর দিনেও ছিলেন স্কুলে। এই গুণী মানুষটি কর্মক্ষেত্রে যেমন সফল, তেমনি পরিবার প্রধান হিসেবেও।

আরও পড়ুন : যেসব সরকারি চাকরিজীবীর বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত

এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর করেছেন। মেয়ে পশুপালনের ওপর স্নাতকোত্তর করছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর স্ত্রী আরতী বিশ্বাস গৃহিণী।

স্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল।

সত্যজিৎ মন্ডল বলেন, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকতা করার খুব ইচ্ছা ছিল। পড়াশুনা শেষ করে যখন চাকরি পায়, তখন নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করি, শিক্ষকতার জীবনে কোনো দিন ছুটি নেবো না।

আরও পড়ুন :ছুটিকালীন বেতন সম্পর্কে নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা

সত্যজিৎ মন্ডল তার বিয়ের দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিয়ে শেষ না করে সকালে উঠে স্কুলে গিয়েছিলাম। প্রথমে তো আমার পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেতে দেবে না। তারপর আমার প্রতিজ্ঞার কথা বলার পর সবাই স্কুলে যেতে দিতে রাজি হয়। স্কুল শেষ করে আবার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করি।

‘চলতি বছর শেষ হবে চাকরির বয়স। অবসরে গেলে আমার গ্রামে পাঠাগার তৈরি করব। সেখানেই এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে জ্ঞানচর্চা করার ইচ্ছা আছে।’

ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি এখানে যোগ দেই। সেই থেকে সত্যজিৎ মন্ডল আমরা সহকর্মী। কোনোদিন দেখিনি ঝড়-বৃষ্টি বা অসুস্থতার কথা বলে তাকে ছুটি নিতে।

আমি একদিন স্কুল মিটিংয়ে সত্যজিৎ মন্ডলকে প্রশ্ন করি, আপনি ছুটি না নিয়ে নিয়মিত স্কুলে আসেন। এর কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের না দেখলে আমার ভালো লাগে না।

স্কুল ৯টায় শুরু হলেও তিনি সাড়ে ৮টার মধ্যে উপস্থিত হন। চলতি বছর সত্যজিৎ মন্ডলের কর্মজীবন শেষ হবে। তাকে ছাড়তে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। তারপরও তাকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানাতে চাই।

সোনালীনিউজ/আইএ