ঢাকা : জেএসসি-জেডিসির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও ইবতেদায়ি পরীক্ষাও বাতিল হতে পারে। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর স্তরভিত্তিক শিখন জ্ঞান যাচাই করে নেওয়া হবে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। এর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে তোলা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে এসব তথ্য জানা যায়। তারা বলছে, প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বছরে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে প্রথম সাময়িক, আগস্টে দ্বিতীয় সাময়িক, নভেম্বরে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা ও অন্য স্তরে বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। এসব পরীক্ষার ওপর মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ ও রোল নম্বর নির্ধারণ করা হয়।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাসে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি বছরের তিন মাস কেন্দ্র করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্লাস অনুযায়ী যতটুকু জ্ঞান অর্জন জরুরি তার ওপর ভিত্তি করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। সেটি পড়ানোর পর দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মুনসুরুল আলম বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা দুটি সাময়িক পরীক্ষা নিতে পারিনি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ক্লাসভিত্তিক শিখন জ্ঞান অর্জনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো হবে। স্তর অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শিখতে সক্ষম হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে আমরা ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেবো।
তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের ছিল। সময় স্বল্প হওয়ায় এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল প্রকাশ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে এ পরীক্ষা বাতিলে প্রাধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী সেটিতে অনুমোদন দিলে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। অন্য স্তরেও বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে তোলা ও তাদের রোল নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করার বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের এখনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে এ নির্দেশনা পাঠানো হবে। পরীক্ষা আয়োজনসহ সবকিছু করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
এদিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, শুরু থেকে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে ছিলাম। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা হিসেবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তিনি সম্মতি দিলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণির পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পরীক্ষা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর বার্ষিক পরীক্ষা নেবো। সে পরীক্ষার ওপর মূল্যায়ন করে পরবর্তী ধাপে তোলা হবে।
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজে পাঠদান শুরু হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখন জ্ঞান অর্জনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তত্ত্বাবধানে তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে তা পড়ানো হচ্ছে। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ও দুদিন করে ক্লাস নেওয়া হলেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস করানো হচ্ছে দুটি বিষয়ে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বোর্ড পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে আসায় পঞ্চম শ্রেণির পিইসি পরীক্ষা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই