ঢাকা : প্রায় দেড় কোটি স্কুলশিক্ষার্থীর শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা এক বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। একই সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে আটকে আছে তাদের নিয়মিত উপবৃত্তির অর্থ। এ নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগ নেয়া হলেও সুরাহা মেলেনি।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য যে ভাতা দেওয়ার কথা ছিল তা এখনো দেশের সামান্য কিছু উপজেলা ছাড়া সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছায়নি। এই অর্থ বহুদিনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকউন্টে পড়ে আছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা উপকরণ কেনার টাকাও। যা এখনও ছাড় করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয়ের।
প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা দেবার উদ্যোগ সরকার। নানা প্রক্রিয়া শেষে এখন মোবাইল ফাইনান্সিয়্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে এই টাকা পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা উপকরণ কেনার টাকাগুলো ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) করা আছে। এখন কেবল বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে গেলেই এটি বিতরণ করা যাবে।
করোনার ছোবলের মধ্যে দীর্ঘ এক বছর উপবৃত্তি ও ভাতা না পাওয়ার বিষয়ে অভিভাবকেরাও হতাশ। এ বিষয়ে এক শিক্ষার্থীর সেলিনা খাতুন বলেন, করোনার সময়ে সরকারের দেয়া উপবৃত্তির টাকা অনেকটা সাহায্য করেছিল। এখন সবকিছুর দাম বেড়েছে, এই সময়ে উপবৃত্তি ও ভাতার টাকা না পেয়ে কষ্টও বেড়ে গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পুরো বিষয়টি আটকে আছে। মন্ত্রণালয়েল একটি চিঠির কারণে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের দুই-তিনজন কর্মকর্তার অনাগ্রহ এবং বিরোধিতার কারণে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ভাতা বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ।
১৮ নভেম্বরের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল নম্বর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শুরুর দিকে ২ লাখ ১ হাজার ২৬৫টি অ্যাকাউন্টে ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে নগদ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই নম্বরগুলোতে উপবৃত্তি বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।
কেন টাকা পাঠানো যাচ্ছে না, জানতে চাইলেও এ বিষয়ে নগদ-এর হেড অব পাবলিক কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম সজল গণমাধ্যমকে বলেন, “সরকারের ভাতা ও সহায়তা বিতরণকে আধুনিক একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর নিয়ে এসেছে নগদ। গত বছর আমরা সাড়ে তিন কোটি মানুষকে আট কোটিবার সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভাতা পৌঁছে দিয়েছি।”
জাহিদুল ইসলাম সজল আরো বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও ভাতার টাকা বিতরণে সম্পূর্ণ তৈরি আছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলেই মুহূর্তে আমরা সব ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ সম্পন্ন করতে পারব। এ বিষয়ক আমাদের ডেটাবেজও পুরোপুরিভাবে তৈরি আছে।’
এর আগে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের দায়িত্ব পায় নগদ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষার্থীদের মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর এবং শিক্ষার্থীর নিবন্ধিত নাম দিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি হয়। সেই ডেটাবেজ অনুসারেই নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো উপবৃত্তি ও ভাতা বিতরণ করেছে তারা।
এর আগে এই মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব হিসেবে গোলাম মো. হাসিবুল আলম যখন দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন নানা কারণে নগদ-এর বদলে অন্য অপারেটরকে ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দিতে চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। তবে নগদ-এর মাধ্যমে সরকারি ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের কারণে শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে এটি সম্ভব হয়নি, বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সোনালীনিউজ/এমটিআই