প্রাথমিক শিক্ষককে দেয়া শোকজ নোটিশে ১৯টি ভুল!

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২২, ১২:৫৯ পিএম

ঢাকা: রমজান মাসের স্কুল ছুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করায় একজন শিক্ষককে শোকজ করেছেন জয়পুরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু ওই নোটিশে সাতটি বানান ভুল লিখেছেন তিনি। এছাড়া কয়েকটি শব্দের ভুল ব্যবহারও করেছেন। নোটিশের প্রতিটি লাইনে কোনো না কোনো ভুল করেছেন জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজোয়ান হোসেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ২০ রমজান পর্যন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমান। জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই শিক্ষক সরকারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে অসদাচরণের সামিল। তাই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজোয়ান হোসেন গত বৃহস্পতিবার নোটিশে স্বাক্ষর করেন।

শিক্ষক মাহবুবুর রহমানকে দেয়া শোকজ নোটিশটি আমাদের হাতে এসেছে। নোটিশটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুরুতে বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে অসদাচারণ বানান লিখেছেন ‘অসদাচরন’। অসদাচরণের অভিযোগে কৈফিয়ত তলব করা হলেও তিনি বিষয়ে উল্লেখ করেছেন ‘অসদাচরনের দায়ে’। 

নোটিশের প্রথম বাক্যেই তিনি সত্ত্বেও শব্দের বানান লিখেছেন ‘সত্বেও’। দ্বিতীয় বাক্যে কুরুচিপূর্ণ শব্দের বানান লেখা হয়েছে ‘কুরুচিপূর্ন’। তৃতীয় বাক্যে ভাবমূর্তি বানান লেখা হয়েছে ‘ভাবমূর্তিন’। চতুর্থ বাক্যে দুইটি ভুল করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ বাক্যে ঊর্ধ্বতন বানান তিনি লিখেছেন ‘উর্ধ্বতন’ এবং কর্তৃপক্ষ বানান লিখেছেন ‘কর্তৃ পক্ষ’। পঞ্চম বাক্যে তিনি ব্যাতিরেকে বানান লিখেছেন ‘ব্যাতিরেখে’। ষষ্ঠ বাক্যে তিনি বিরূপ বানান লিখেছেন ‘বিরুপ’। সপ্তম বাক্যে তিনি আবারও অসদাচরণ বানান লিখেছেন ‘অসদাচরন’ এবং সাব্যস্ত বানান লিখেছেন ‘সাব্যস্থ’।  নোটিশে নিজের ও অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম ও পরিচয় সঠিকভাবে লেখা হয়েছে।  

এ শিক্ষককে দেয়া শোকজ নোটিশে লাইনে লাইনে ভুলকে কর্মকর্তার অদক্ষতা বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি ও প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ওই কর্মকর্তা অজ্ঞতা ও অদক্ষতার কারণে অ্যাত্তোভুল করেছেন। আর ফেসবুক পোস্টের জন্য ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু ঠিক হয়নি। যে পোস্ট দেখতে পেরেছি তাতে তিনি কুরুচিপূর্ণ কিছু বলেছেন বলে মনে হয়না। 

উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শোকজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এ প্রবীণ শিক্ষক নেতা।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজোয়ান হোসেন রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘তাড়াতাড়ি করে নোটিশ জারি করায় কিছু ভুল হয়েছে। ওইসময় বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছিলো। এজন্য ফাইল সেভ হয়নি। নোটিশ জারি হওয়ার পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।’

শিক্ষককে শোকজের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই শিক্ষক এখনো শোকজের জবাব দেননি। যারা বলেছেন তাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শোকজ করা হয়েছে তারা হয়তো তার একটি পোস্ট দেখেছেন। ওই শিক্ষক আরও একটি কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিয়েছিলেন, যার প্রিন্ট কপি আমাদের হাতে আছে। ওই শিক্ষক পরে সেই পোস্টটি ডিলেট করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, শোকজ চাকরির অংশ। এর মাধ্যমে তার কর্তৃপক্ষ তার কাছে একটি বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়েছেন। কাউকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শোকজ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে শোকজ করা হয়েছে। উনি জবাব দাখিল করলে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সে জবাবে সন্তুষ্ট হলে তার বিরুদ্ধে আর কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না।

সোনালীনিউজ/এন