পদায়নের আগেই বদলির জোর দাবি

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম

ঢাকা : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি দীর্ঘ প্রায় তিন বছর বন্ধ। চরম হতাশায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা। সব সেক্টরে বদলি কর্যক্রম নিয়মিত থাকলেও খড়গ শুধু প্রাথমিক শিক্ষকদের মাথার ওপর।

এরপর নতুন বদলি চালু না হলেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নতুন শিক্ষক পদায়ন ইস্যুতে।

শূন্যপদ পূরণ হলে বাসস্থানের নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে যেতে না পারার শঙ্কা বদলি প্রত্যাশীদের। নতুন শিক্ষক পদায়নের আগে সব ধরনের বদলি কার্যক্রম শেষ করার দাবি শিক্ষকদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষকদের মানষিক দুশ্চিন্তায় রেখে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়।    

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩১ হাজার ৫৬৯ জন। আর নারী শিক্ষক রয়েছেন দুই লাখ ৩৫ হাজার ৯১১ জন, যার বড় একটা অংশ বদলি প্রত্যাশী।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের এপ্রিলে অনলাইনে বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়ে। ২০২০ সাল থেকে এই বদলি শুরু হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসের কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ২৯ জুন কালিয়াকৈর উপজেলায় অনলাইন সফটওয়্যারের পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সারা দেশে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। আগস্ট মাসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হতে পারে। এরই মধ্যে গত ১৩ জুন বদলির স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই পাইলটিংয়ের কাজ শেষ হতে পারে। এরপর সফটওয়্যারের ত্রুটি থাকলে সেগুলো সমাধান করতে সময় লাগতে পারে। ২০২০ সালের ঝুলে থাকা বদলির বিষয়টিতে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও উপজেলা পর্যায়ের বদলি পদায়নের আগেই খুলে দেয়া হতে পারে।

 তবে সব ধরনের বদলি খোলা হবে কি-না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। চলতি বছরেই নতুন শিক্ষক পদায়নের কাজ সম্পন্ন হবে। শিক্ষকদের স্বার্থে বদলির নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন বদলি বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা চরম কষ্টে আছে সে বিষয়টিও মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পদায়নের আগে বদলি চালু করার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহু শিক্ষক বলেন, প্রায় তিন বছর যাবত বদলি বন্ধ রয়েছে। বাসস্থান থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শ্রেণিপাঠদানে এর প্রভাব পড়ছে। বদলি বন্ধ থাকায় কারো কারো সংসার পর্যন্ত ভেঙে গেছে। অনেক শিক্ষক বছরের পর বছর দূর-দূরান্তের দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা।

বলা হচ্ছে, জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বদলি হবে। নতুন শিক্ষক পদায়নের আগে আমরা বদলি হতে না পারলে পরবর্তীতে বদলি হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। পদগুলো পূরণ হয়ে যাবে। দিন দিন মানসিকভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সহসা বদলি না হতে পারলে শ্রেণিপাঠদানে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। প্রাথমিক শিক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান তারা।  

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার শিক্ষক মাজেদা বলেন, আমার পিতার ঠিকানায় চাকরি করি। স্বামীর বাড়িও অন্য উপজেলায়। সে ঢাকায় চাকরি করে। বাসস্থান থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে দুর্গম এলাকা হওয়ায় চার বছর বয়সি বাচ্চাকে বাসায় রেখে স্কুলে যাতায়াত করি। এছাড়াও আমি বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নতুন শিক্ষক পদায়নের আগে বদলি চালু না হলে আমার স্বামীর ঠিকানায় কিংবা পিতার ঠিকানার নিকটবর্তী কোনো বিদ্যালয়ে বদলি হতে পারব না।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার আফরোজা বেগম বলেন, স্থায়ী ঠিকানা থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব যাতায়াত ৭০ কিলোমিটার। সন্তান, শাশুড়ি অসুস্থ। পরিবারের কাজ করে প্রতিদিন দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হয়।

মাগুরার ছনিয়া রহমান বলেন, স্বামীর বাসস্থানের নিকটবর্তী স্কুলে চাকরি করি। দুই বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছে। এখন পিতার বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার যাতায়াত করে স্কুল করতে হয়। কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাবো যেন নতুন শিক্ষক পদায়নের আগেই আমাদের বদলির সুযোগ দেয়া হয়।

শিক্ষক নেতা মু. মাহবুবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বদলি বন্ধ রয়েছে। মানসিকভাবে অনেক শিক্ষক ভেঙে পড়েছেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন দূর-দূরান্তের স্কুলে আছেন তারা যদি নতুন শিক্ষক পদায়নের আগে পছন্দের বিদ্যালয়ে বদলি না হতে পারেন তাহলে তাদের জন্য পরবর্তীতে বদলি হওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। শিক্ষকরা হতাশার মধ্যে থাকবে এবং পাঠদানে মনোনিবেশ হারাবে। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে নতুন শিক্ষক পদায়নের আগে সব ধরনের বদলি চালুর কোনো বিকল্প নেই।

কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাব, প্রয়োজনে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন শিক্ষকদের পদায়নের আগে বদলি চালু করা হোক।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি সচিব স্যার একটা আলোচনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে সারা দেশে ৪৫ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ পদায়নের আগে পুরাতন শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

শিক্ষকদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত  নেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। সূত্র : আমার সংবাদ

সোনালীনিউজ/এমটিআই