শিক্ষকের মারধরে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, স্কুলে ভাঙচুর-বিক্ষোভ

  • সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে স্কুলে শিক্ষকের মরধরে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৬ জুলাই) উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া স্কুলছাত্রের নাম প্রতাপ চন্দ্র দাশ (১৪)। তিনি ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা চন্ডিপুর গ্রামের দ্বীনবন্ধু দাসের ছেলে এবং নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।

জানা যায়, বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে টিফিনের সময় বিদ্যালয় ভবনের ছাদে কেক কাটে প্রতাপ চন্দ্র দাশসহ তার কয়েকজন বন্ধু। এ সময় তারা টিকটক ভিডিও করছিল। চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শুনে বিষয়টি নজরে পড়ে সহকারী শিক্ষক অবকাশ খাঁর।

তিনি চিৎকার করতে নিষেধ করলে শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় অবকাশ খাঁ তাদের চড় ও কিল-ঘুসি মারেন। এর পরপরই বাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রতাপ। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

[203212]

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ছাত্র বাড়ি ফিরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় রাত ৯টা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

এদিকে প্রতাপের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে তার সহপাঠীসহ এলাকাবাসী নিহত প্রতাপের মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে যায় এবং বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষসহ অন্তত ১০টি শ্রেণিকক্ষ ভাঙচুর করে। এ ছাড়া ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পাশাপাশি দুটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ চলে।

এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক অবকাশ খাঁকে থানায় নিয়ে যায়। এ নিয়ে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ঘটনাস্থলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম বলেন, কোনো ছাত্রকে মারধর করা হয়নি। বকাঝকা করা হয়েছে। স্কুলের নিয়ম ভেঙে তারা জন্মদিন পালন করছিল। আমার যেতে দেরি হওয়ায় একজন শিক্ষক আমাকে ফোন করেছিলেন।

তিনি বলেন, পরে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের অভিভাবকের কাছে ফোন করি। কিন্তু কারও অভিভাবক আসেনি। শুধু প্রতাপের চাচা সেখানে এলে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে তাকে বকাঝকা করা হয়। পরে শুনেছি সে নাকি মারা গেছে। হয়তো বাড়ি ফিরে সে আত্মহত্যা করেছে।

প্রতাপের চাচি তাপসী দাশ জানান, প্রতাপ দুপুর দেড়টার দিকে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে টয়লেটে যায়। সেখান থেকে সে বমি করতে করতে বের হয়। তখন সে পরিবারের সদস্যদের মারধরের ঘটনা জানায়। সে জানায় তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। এ সময় তার বড় ভাই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কালিগঞ্জ থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, উত্তেজিত জনতা নলতা স্কুলে হামলা চালায়। তারা কক্ষ ভাঙচুর এবং মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে দু’জন শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই