ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটি।
একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে আনা একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগেরও প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের সভায় তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সদস্য ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, দুজনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে পাঠানো হয়েছে। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলকে তদন্ত করতে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
[222874]
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দু শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্নাতকোত্তরের একটি ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছা করে নম্বর কম দেওয়ার’ অভিযোগে তোলেন। এরপর ওই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেন প্রক্টরের কাছে। কিছু অডিও রেকর্ড ও মেসেজের স্ক্রিনশটও জমা দেন তিনি।
১১ ফেব্রুয়ারি বিভাগের আরেক নারী শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীও তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট গত ৩ মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে যৌন হয়রানির অভিযোগ খতিয়ে দেখে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। তথ্য অনুসন্ধান কমিটি সেই প্রতিবেদন জমা দিল দুই মাস পর।
অন্যদিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ফেরদৌস জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতেন। সেই বিভাগের এক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। পরে বিভাগ থেকে অভিযোগটি উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়।
গত ৩১ মার্চ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সেই প্রতিবেদন মঙ্গলবার জমা পড়ে।
[222873]
পিএইচডি জালিয়াতি তদন্তে কমিটি : এমফিলের থিসিস নকল করে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছিরকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এসএম জাবেদ আহমদ।
কমিটিকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ডিন পদ ফিরে পেলেন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ : এক অলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় অব্যাহতি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে হাই কোর্টের নির্দেশে ডিন পদ ফিরিয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট।
ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামানকে সরিয়ে পুনরায় তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান বলে অভিযোগ ওঠে।
[222866]
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিকভাবে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং তা ‘এক্সপাঞ্জ’ করার দাবি জানান। পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামান তার বক্তব্যের ওই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন।
ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে ওই বছরের ২০ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
২০২৩ সালের ২৯ অগাস্ট অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘অবৈধ ও বাতিল’ করে হাই কোর্ট। এ রায়ের ফলে তিনি সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন বলে জানান তার আইনজীবীরা।
হাই কোর্টের নির্দেশে অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে ডিন পদ ফিরিয়ে দিল সিন্ডিকেট।
এমটিআই