ঢাকা : বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই দিতে না পারায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বই বিতরণ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেছেন, কোন কোন জেলায় ষড়যন্ত্র করে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলোনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের বইগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে যে এখনই সব দিতে পারা গেল না এজন্য তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং তাদের কাছে আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
তবে এটুকু সান্ত্বনা, যখন বইগুলো পাবে ছাত্রছাত্রীরা আগের চেয়ে সুন্দর দেখাবে এবং বছরের মাঝখানে পাতাগুলো ছিড়ে যাবে না।
উপদেষ্টা বলেন, কাউকে দোষারোপ করতে আমি চাই না। এর মধ্যে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। এমনকি বই বিতরণের ক্ষেত্রে কোন কোন জেলায় ষড়যন্ত্র করে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছিল। কত দিক থেকে আমাদের বিপরীতমুখী শক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে এটা কল্পনাতীত। বিপরীতমুখী শক্তি কত জায়গা থেকে আসছে সেটা আমরা বুঝতেও পারি না।
[240865]
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে, যা দেখা গেছে ফেলে আসা বছরেও।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে। এবার স্কুলগুলোতে সেই আয়োজন নেই। নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো কোনো বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুক তুলে দিতে পেরেছেন শিক্ষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগেই জানিয়েছিল, বছরের প্রথম দিন এবার নতুন কোনো পাঠ্যবই হাতে পাবে না প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ; যাদের এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কয়েকজন প্রেসমালিক ও কাগজ উৎপাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আমি কৃতজ্ঞতা জানাবো কিছু কিছু প্রেসের মালিক, কিছু কিছু সবচেয়ে বৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি। তারা আমার ব্যক্তিগত অনুরোধে এখনকার যে বাজার মূল্য বেড়ে গেছে তার থেকে কমিয়ে আগের বাজারমূল্যে কাগজ সরবরাহ করেছেন।
প্রেসের কিছু মালিকরাও বলেছেন আমাকে, ছেলেমেয়েরাও তো প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য আমরা কি করব না? তাদের জন্য আমরা সবাইকে দোষারোপ করতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি কারা কারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং কারা কারা আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। আমরা সেটা পরবর্তীতে মূল্যায়ন করে দেখব এবং পরবর্তীতে যেই ক্ষমতা আসবে তার কাছে সে তথ্য দিয়ে যাব।
[240864]
বইগুলো অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে পরিমার্জন করতে হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রতিদিন এখানে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, কোন সেন্টেন্সটা বাদ দিল কোন সেন্টেন্সটা যুক্ত হল, কে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, কে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক, সংবিধান লঙ্ঘন হলো কিনা-এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হতে থাকবে। এতে কোন অসুবিধা নেই যদি পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
বই দেওয়া শুরু, উৎসবে ছেদ : ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা যে নতুন কারিকুলাম এসেছে, তা হঠাৎ করে বদলে দিলাম বদলে দিতে হলো এই তাড়াহুড়ার মধ্যে। তাড়াহুড়া হয়েছে বলেই তো পাঠ্যপুস্তক ছাপানোতে দেরি হল।
কিন্তু নতুন পাঠ্যক্রমে কিছু বিষয় তুলে ধরে ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ওই পাঠ্যক্রমে অনেক গুরুতর সমস্যা ছিল বলে তার মনে হয়েছে। সেটি হল, নবম শ্রেণি ও দশম শ্রেণিতে শুধু সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান পড়ানো হবে, উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান পড়ানোর কোন সুযোগ রাখা হয়নি। নবম শ্রেণি থেকে উচ্চতর গণিত না পড়ালে উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত নেওয়া যেত না। তাতে অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হতো।
তিনি বলেন, এই শিক্ষাক্রম থেকে আগের শিক্ষাক্রমে যাওয়াকে বলা হচ্ছে পশ্চাৎপথে যাচ্ছি কেন? যাচ্ছিলাম বলেই আমি পেছনে ফিরে গেছি।
এখান থেকে আমরা নতুন করে শুরু করব, এখন তো আর সময় পাওয়া গেল না। তাই কিছু পরিমার্জন করা হল। কিন্তু অনেক বিষয়েই আমরা এমনভাবে বইগুলো আরও পরিমার্জন করবো যেন ধারাবাহিকতার কোন সমস্যা না হয়। এবার নবম শ্রেণিতে কিছু হল।
অনুষ্ঠানে এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, মঙ্গলবার দিন পর্যন্ত ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে আমরা ৬ কোটি বই পাঠিয়েছি। ৪ কোটি বই ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে এবং আজকের মধ্যে এগুলো পাঠানো হয়ে যেতে পারে।
৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের অবশিষ্ট সব বই, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের ৮টি বই আর ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই আমরা দিয়ে দিতে পারবো। আর দশম শ্রেণির বই ৫ জানুয়ারি দিয়ে দিতে পারবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ সরকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম।
এমটিআই