ঢাকা : ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি যেন দুঃসময় পার করছেন।
সম্প্রতি এক আবাসন ব্যবসায়ী তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করেছে বলে রোববার (১৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি এই ঘটনার বিচার চেয়ে পুলিশ ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছে প্রত্যাশিত সাড়া পাননি বলেও অভিযোগ করেন বাংলা সিনেমার এই হার্টথ্রব নায়িকা।
বেশিরভাগ শোবিজকর্মী পরীমণির এই দুর্দিনে চুপ থাকলেও অনেকেই আবার তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ সরাসরি দেখা করে সান্তনা দিয়েছেন, কেউ আবার ফেসবুকে প্রতিবাদ করেছেন।
রোববার ফেসবুকে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করার পর তার পাশে দাঁড়ান নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। বনানীতে অবস্থিত পরীর বাসায় গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন এই পরিচালক। রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তাকে পরীর পাশে থাকতে দেখা যায়।
পরীমণির সঙ্গে কখনো কাজ করেননি চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিমেষ আইচ। তারপর পরীর এই দুর্দিনে ফেসবুকে সরব হয়েছেন এই নির্মাতা।
তিনি লেখেন, পরীমণির সঙ্গে আমার জীবনেও দেখা হয়নি, কাজ হয়নি, তবুও সে আমার কলিগ (সহকর্মী)। যে কোনো দুঃসময়ে আমি আমার কলিগের পাশে থাকবো এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, তার পাশে আছি।
পরীমনিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা বিরূপ মন্তব্যে প্রতিবাদ করে অনিমেষ আইচ আরও লেখেন, এইতো অল্প কিছুদিন আগে একটি মেয়ের আত্মহত্যা এবং তার পরবর্তী প্রভাবশালীদের দাপট তো পরিষ্কার দেখলাম এই চর্মচক্ষে।
তাই ভীষণই ভয় হয় পরীমণি কিংবা ফাতেমা, রহিমারা বিচার তো পায়ই না। উল্টো আক্রান্ত মেয়েটির চরিত্র হনন করার জন্য আমরা সদাই উদগ্রীব হয়ে থাকি। তার উপর সে তো একজন নায়িকা। তাকে নিয়ে বিকৃত মন্তব্য করার তো আমাদের নাগরিক দায়িত্বের পর্যায়ে পরে।
এই নির্মাতা আরও বলেন, দেখা যাক প্রকৃত সত্যটা কী! আর আইনের হাত কতটা শক্তিশালী। একটা কাক মারা গেলে রাজ্যের কাকেরা সেখানে এসে কারণ জানতে কা কা শুরু করে। আমাদের কাকেদের সরব কা কা ধ্বনি শোনার জন্য কান পেতে রইলাম। শুভরাত্রী।
এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অপূর্ব রানা।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, আমি সাত বছর ধরে পরীমণিকে দেখছি। আজকের পরীমণি সম্পূর্ণ আলাদ। কতটা আঘাত পেলে পাথরের মতো শক্ত একটি মেয়ে বরফের মতো গলে যায় তা পরীমণিকে দেখে বুঝলাম। অপরাধী যেই হোক, যত বড়ই হোক তার বিচার হতেই হবে। অনেকে যা পারেনি পরীমণি তার প্রতিবাদ করে দেখিয়েছে। তবে শুধু নিরব প্রতিবাদ নয়, এখন প্রয়োজন কঠিন প্রতিরোধ।
পরীমণির পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী। ফেসবুকে তিনি লেখেন, কোনো ব্যাপার না কে কী বললো। পরীমণি আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে একজন অভিনেত্রী এবং একজন নারী। আমি তার পাশে আছি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াত খান লেখেন, তনু, নুসরাত আর মুনিয়াদের বিচারহীন আত্মারা যখন ডুকরে কাঁদে, বিবেকহীন জাতির নায়িকা পরীমনিও তখন সম্ভ্রমহানির ফাঁদে।
পরীমণির সঙ্গে ঘটা এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন নির্মাতা রাশিদ পলাশ। তিনি লেখেন, যুগে যুগে মানুষ তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। এটা তার স্বভাব। অধিকার। পরীও তাই করেছে। বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি আক্রমণ এর স্বীকার হয় নারীরা। এবার ও তাই হয়েছে। যত আক্রোশ নারীর উপর।
রাত ১২ টার পর বের হয়েছো তুমি, তোমাকে রেপ করা জায়েজ। তার উপর নায়িকা। তুমি প্রতিবাদ করতে পারবে না। এ অন্যায় হতে দেয়া যায় না। মেনে নেওয়া যায় না। আমরা পরীর সাথে ঘটে যাওয়া জঘন্যতম অপরাধ এর বিচার চাই। এটা অপরাধ, আপনি যত বড় মানুষ হোন না কেন আপনি এটা করতে পারেন না।
পরিচালক বুলবুল বিশ্বাসে লেখেন, ধর্ষণের সংজ্ঞা বলে, ১৬ বছর বয়সের নিচে কোন মেয়ের সম্মতিতে বা অসম্মতিতে এবং ১৬ বছরের উর্ধ্বে অসম্মতিতে শারিরীক সম্মন্ধ করলে তা ধর্ষণ বলেই গণ্য। হোক সেটা পতিতা, আর হোক সেটা আপনার ঘরের বৌ। পিছনের গল্প নাটক হোক আর বাস্তব হোক। এর বিহিত করা উচিত।
পরিচালক শিহাব শাহীন লেখেন, এই দেশে আইন দুই প্রকার। ধনীদের জন্য আইন, সাধারণের জন্য আইন টাকাওয়ালা ক্ষমতাবানরা এই দেশে সকল আইনের উর্ধ্বে।
এছাড়া নাট্যকার ওমর ফারুক হৃদয় ও পরিচাক শামীম আহমেদ রনিসহ অনেকে পরীমণির সঙ্গে ঘটা এই ঘটনার প্রতিবাদ করে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
শুধু চলচ্চিত্র পরিচালক নন, অভিনেত্রী ও সংবাদ পাঠিকারাও পরীর সঙ্গে ঘটা এই ঘটানার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর লেখেন, আমরা কোথায় আছি! এ কোন দেশে আমরা বাস করছি! স্বনামধন্য চিত্রনায়িকা পরীমনির সাথে যে অন্যায় হয়েছে , তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। নারীর প্রতি কোন সহিংসতা ও অত্যাচার সহ্য করবো না, মানবো না।
পরীমনিকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন সংবাদ নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তবে কোনো মন্তব্য করেননি।
সংবাদপাঠিকা মিশু চৌধুরী নিজের ফেসবুকে লেখেন, পরীমনি পাশে আছি। এই মুহুর্তে আপনাকে আরও শক্ত হতে হবে। বিচার আপনিই পাবেন। আপনি নিজেই আপনার মনোবল। দোয়া করি এই কঠিন সময় যেন খুব তাড়াতাড়ি পার হয়।
এদিকে সোমবার (১৪ জুন) সকালে আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ অজ্ঞাতনামা ছয় জনকে আসামি সাভার মডেল থানায় মামলা করেন অভিনেত্রী পরীমণি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে ঢাকাই চলচ্চিত্রে এই নায়িকা।
এর আগে রোববার রাতে বনানীর বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গেল বুধবার (৯ জুন) রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও পোশাক ডিজাইনার জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলাম। রাত ১২টার দিকে অমি তাদের নিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয় অমি। পরে অমি আমাকে সেখানে থাকা নাসির উদ্দিন মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। সে সময় তিনি নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাসির আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারেন। তারপর নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন।
ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন পরীমনি। সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তার অভিযোগ রেকর্ড করেননি বলে অভিযোগ করেন এই নায়িকা। এমনকি পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান বলে জানান।
সোনালীনিউজ/এমটিআই