পরীমণির করুণ কাহিনী

পুড়ে মারা যান মা, খুন হন বাবা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১, ০১:৪৯ পিএম

ঢাকা : র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমণি গ্রেফতারের পর তার বাবা মায়ের ছবি নেটজগতে ভাইরাল হয়েছে। ছোটবেলায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছেন পরীমণি। এই নায়িকা প্রায়ই বলতেন, এগুলো তার জীবনের সবচেয়ে ‘অন্ধকার’ অধ্যায়।

পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রামের বাসিন্দা এই পরীমণি। তিনি সেখানে মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। তার পুরো নাম শামসুন নাহার স্মৃতি।

সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ। ওই কলেজেই পরীমণি পড়াশোনা করেছেন। কলেজের ভর্তির রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুসারে, ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি।

মাদক মামলায় গ্রেফতার ঢালিউড নায়িকা পরীমণিকে নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে আসছে নিয়মিত। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না, এ আলোচিত নায়িকার জীবনের করুণ কিছু কাহিনী। যা যে কারো হৃদয়ে দাগ ফেলবে।

একমাত্র অভিভাবক নানার সঙ্গে পরীমণি

জানা গেছে, পরীমনির মায়ের মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। তার বাবাকে করা হয় খুন! ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের কথা। পরীমণি তথা স্মৃতির বয়স তখন মাত্র তিন বছর। তার বাবা মনিরুলের তখন ঢাকায় পোস্টিং। সেখানে একটি বাসায় আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধ হন পরীমণির মা সালমা।

এ সময় মাত্র তিন বছরের সন্তান পরীমণিকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার বাবা। ঢাকায় হাসপাতালে কিছুদিন দগ্ধ স্ত্রীর চিকিৎসা করান মনিরুল। পরে তিন বছরের মেয়েকে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে রেখে যান মনিরুল। এর দুই মাস পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমা। তিন বছরেই মা-হারা হন পরীমণি। মায়ের আদর স্নেহ বঞ্চিত সে।

বাবার সঙ্গে পরীমণি

বেলায়েত হোসেন বলেন, সেই তিন বছর বয়স থেকে মাতৃহারা পরীমণিকে তার নানা-নানি ও খালারা লালন-পালন করেছেন। পরীর নানি মরহুমা ফাতিমা বেগম দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষক হই।

স্মৃতি ওরফে পরীমণি সর্ম্পকে দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন আরো বলেন, ছোট থেকে পরীমণি ভালো ছাত্রী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এখন পর্যন্ত এই স্কুল থেকে আর কেউ বৃত্তি পায়নি। মা হারানো এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই অনেক আদর করত।

পরীমণির বাবা খুন হওয়ার বিষয়ে তার ছোট খালা তাসলিমা পাপিয়া বলেন, স্মৃতির বাবা ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। ২০১২ সালের কথা। কোনো একটা কারণে তার চাকরি চলে গিয়েছিল। তখন তিনি গ্রামের বাড়িতে থেকে ব্যবসা করতেন। আমরা শুনেছি, সেই ব্যবসার বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
 

পরীমণির নানার বাড়ি ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেফতার হন আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিতে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পরীমণিকে একনজর দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছিলেন নানা শামসুল হক। কিন্তু নাতনিকে দূর থেকে দেখার সুযোগ হলেও কথা বলা সম্ভব  হয়নি। তার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই