ঢাকা : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পীদের উন্নয়ন এবং চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করার লক্ষে ১৯৮৪ সালে গঠিত হয় বিএফডিসি কেন্দ্রীক সংগঠন শিল্পী সমিতি। সংগঠনটির শুরু থেকেই নেতৃত্বে ছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকারা।
যারা সিনেমায় লিড দেওয়ার পাশাপাশি সমিতির নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ তালিকায় ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক ও আমেদ শরীফ থেকে শুরু করে হালের শাকিব খান ও অমিত হাসান। মাঝে নেতৃত্বে ছিলেন অভিনেতা খলিল উল্লাহ খান, ইলিয়াস কাঞ্চন, মাহমুদ কলি, আলমগীর, মাহবুব খান গুই, মিজু আহমেদের মতো শিল্পীরা।
বর্তমানে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মিশা সওদাগর আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন জায়েদ খান। এতোকাল সমিতি বিতর্কের বাইরে থাকলেও মিশা-যায়েদ প্যানেল আসার পর একের পর এক বিতর্ক উঠছে সমিতির কার্যকলাপ নিয়ে। শিল্পীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসছে যে সমিতি শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গঠিত হয়েছিলো সেই সমিতি এখন শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ নজির পরীমণি ইস্যুতে সদস্যদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো সদস্যপদ স্থগিত করা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রথম সারির তারকাদের সাথে শিল্পী সমিতির সাথে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। সমিতির কোনো কর্মকাণ্ডে নেই প্রকৃত শিল্পীদের অংশগ্রহণ। এমনকি সিনিয়র শিল্পীদের মতামতও আজকাল অগ্রাহ্য করছে এই সমিতি।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই গণমাধ্যমের কাছে সমিতির এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে বারবার জায়েদ খান বরেণ্য অভিনেতা আলমগীরের নাম বলে আসছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নাকচ করে গণমাধ্যমে নায়ক আলমগীর সাফ জানিয়েছেন তিনি শিল্পী সমিতির কোনো এক্সিকিউটিভ মেম্বার নন। আলমগীর বলেন, ‘আই অ্যাম নট এন এক্সিকিউটিভ মেম্বার। আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, জানি না। শিল্পী সমিতি থেকে এখন কেউ যদি আমার নাম বলে থাকে, সেটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।’
সাম্প্রতিক পরীমণি ইস্যুতে ইলিয়াস কাঞ্চনের মতকে উপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতারা। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর চিত্রনায়িকা পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করার বিরোধিতা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু তার কথা আমলে নেয়নি সমিতি। বিষয়টি নিযে দুঃখ পেয়েছেন বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন।
হালের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান তো সমিতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নই তুলেছেন। সমিতি নিয়ে তিনি বলেন, সমিতির বর্তমান আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?
বর্তমানে সমিতির কোনো কর্মকাণ্ডে প্রথম শ্রেণীর নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, ওমর সানী, আরিফিন শুভ, বাপ্পি চৌধুরী ও সাইমনদের চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না অভিনেত্রী মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা, নিপূন, মাহিয়া মাহি, বুবলী, নুসরাত ফারিয়া ও বিদ্যা সিনহা মিমদের মতো প্রথম সারির নায়িকাদেরও। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ের সিনেমার ব্যস্ত তারকা সিয়াম আহমেদ, দীঘি, পূজা চেরি ও স্পর্শিয়া তো এই সমিতির সদস্যই নন।
বর্তমানে শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ড সঠিক পথে নেই। তাই বড় বড় তারকাশিল্পীরাও সমিতির সঙ্গে নেই বলে জানালেন মৌসুমী। তিনি বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে শিল্পী সমিতির প্রতি শিল্পীদের আস্থা থাকতে হবে। এখনকার সমিতিতে শিল্পীদের আস্থা নেই। আমি মনে করি সবকিছুর ওপরে গিয়ে শিল্পী ও শিল্পের স্বার্থে কাজ করতে হবে সমিতিকে। এখনকার সমিতি কতটা শিল্পী ও শিল্পের স্বার্থে কাজ করছে তা প্রশ্ন রয়েছে।
শিল্পী সমিতির বিভিন্ন কাজে নায়ক অনন্ত জলিলকে নিয়মিত দেখা গেছে নানা সময়ে। আর্থিকভাবে সমিতিতে সাহায্য করতেও দেখা গেছে তাকে। সেই অনন্ত জলিলও এবার এসব সমিতির বিপক্ষে কথা বলেছেন।তিনি বলেন, এফডিসিতে এসব সমিতির কোনো দরকার নেই।
সোনালীনিউজ/এসএন