‘আমাকে এমন লোভী বানানোর অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের’

  • বিনোদন ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩, ১২:১২ পিএম

ঢাকা : গত জানুয়ারির শেষ দিকে রাজধানীর মিরপুরে শুটিংয়ের সময় ‘বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বিস্ফোরণে’ দগ্ধ হয়েছিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। তার শরীর ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে জানা যায়।

দুর্ঘটনার পর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এ অভিনেত্রী।

গত ২৮ মার্চ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন শারমিন। ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পার হলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে ক্ষোভ জানান তিনি। সঙ্গে একটি ছবি জুড়ে দিয়েছেন। যেখানে চোখে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একগুচ্ছ গোলাপ আর তাতে লেখা ‘ট্রাস্ট’। আর ব্যান্ডেজ দিয়ে মুখ বন্ধ।

শারমিন আঁখি লিখেছেন, ‘ইদানীং একটু-আধটু বের হচ্ছি। কাজের মানুষদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে, কথা হচ্ছে। আর ঘুরেফিরে একটা প্রশ্ন আসছে— অভিযোগ করলাম না কেন? অভিযোগ করলে আমি নাকি ন্যায়বিচার পেতাম । তা হলে আপনারা মেনে নিচ্ছেন অন্যায় অবশ্যই হয়েছে। শুধু বিচারটা হয়নি। ধন্যবাদ আপনাদের।’

[209362]

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি অভিযোগ করিনি, এটা ভুল তথ্য। আমি যখন হাসপাতালে, আমার পরিবার তো সংগঠনে গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সংগঠনে হাজির করেছে। তার সামনে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দায়িত্ব তো ওই কমিটি আর সংগঠনের। এখন সংগঠনের কাজ, যে অন্যায়টা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরি করা। এটা কি আমার কাজ? নাকি এখন প্রতি পদে পদে এ জবাবদিহিতা আমাকেই করতে হবে? তা হলে নিজেদের দায় এড়াতে আমাকে কেন অভিযুক্ত করছেন, আমার পরিবার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি?’

এ অভিনেত্রীর কাছে অনেকে জানতে চাইছেন— কোনো ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা। এ ব্যাপারে কথা বলেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘অতি এক্সাইটেড হয়ে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জানতে চাচ্ছেন, আমি ক্ষতিপূরণ চাইলাম না কেন? সংগঠন নাকি ব্যবস্থা নিতে পারত। একটা মানুষ দুর্ঘটনার স্বীকার হলে সবার আগে মাথায় আসে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেল বা কত টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করল। আমি কি একবারও বলেছি— ক্ষতিপূরণ চাই? আমি কি একবারও বলেছি— মামলা করতে চাই? আমার ক্ষতিপূরণ লাগলে আমি সংগঠনের কাছে কেন যাব? যাব তো কোর্টে, ২/১ কোটি টাকার মামলা করতাম, মামলায় জেতার দরকার নেই। শুধু ১০ বছর মামলা টানলেই হতো।’

শারমিন লিখেছেন, ‘আমি সামাজিক মাধ্যমে, বিভিন্ন ইন্টারভিউতে, প্রেস ব্রিফিংয়ে, যখন যেখানে কথা বলতে পেরেছি বারবার রিপিট করেছি— ক্ষতিপূরণ না অন্যায় যেটা হয়েছে সেটির একটি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরি করেন। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার আর কেউ যেন না হয়। আমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলেন তো, ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার ক্ষতি পোষাতে পারবেন কেউ? এ ক্ষমতা কি এ সমাজের আছে? আমাকে এমন লোভী বানানোর অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? ’

শারমিন আঁখির অভিযোগ, ‘একটা তো কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গিল্ড আর ইকুইটি সেই কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সংগঠন থেকে কমিটিকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে না? কমিটি কি রিপোর্ট দিয়েছে? কই সেটা, দেখান? আজকে তো ৯ মাস। কোথায় সেই কমিটি? কমিটি হয়ে যাওয়ার পর কমিটির পেছনে কি আমার পরিবার সরকারি অফিসের মতো বারবার গিয়ে ঘেন ঘেন করবে? কী হলো ভাই, কী করলেন, অগ্রগতি কী...? নাকি সংগঠন সেই কমিটিকে ফলোআপ করবে? নিয়ম অনুযায়ী, কমিটি কমিটির মতো করে তার রিপোর্ট পেশ করবে। ওই কমিটিতে ইমরাউল রাফাত, ইমেল হক, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদ্বীপ আপনারা নাকি ছিলেন। আর কে কে ছিলেন জানি না। দেন আপডেট দেন, কি করলেন এ ৯ মাসে? নাকি সংগঠন আপনাদের কোনো টাইম ফ্রেম বেঁধে দেয় নাই কতদিনের মধ্যে কী করবেন? কোনো মিটিং-মিনিটস নাই, কার সভাপতিতে হলো কমিটি, কে কমিটির আহ্বায়ক? কে কাকে ফলোআপ করবেন?’

তিনি লিখেন, ‘আচ্ছা মেনে নিলাম একটা ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে তখন গিল্ড আর ইকুইটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে কমিটি করেছেন, পরবর্তীতে তো ওই কমিটির একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করাইতে হবে। না কী সাংগঠনিক এই বিষয়গুলো আমি একজন অসুস্থ মানুষ আপনাদের বলে দেব? এখন যদি কমিটিকে খুঁজতে যান, সেই কমিটিই তো খুঁজে পাবেন না। কে কার কাছে জবাবদিহি করবে? আর ওই দিন হাউস মালিককে রাহাত ফোন করে সংগঠনে নিয়ে আসেন। এর পর আপনাদের সঙ্গে বসিয়ে দেওয়া হয় কথা বলার জন্য। ওই লোকের সামনেই তো কমিটি হলো। এর পর থেকে দেখা হলেই অভিযোগ করেন, আমার পরিবার যোগাযোগ করেনি দেখে আপনারা কিছু করেননি। কি হাস্যকর। এই কথা বলে কোন দায় এড়াতে চান, বুঝি না। আমার পরিবার আপনাদের ফলোআপ করবে না ভাইয়া, গিল্ড আর ইকুইটির এক্সিকিউটিভ বডি ফলোআপ করবে। এটাই তো সাংগঠনিক নিয়ম।’

শারমিন আঁখি লিখেছেন, ‘গত ৯ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা যেখানে আমার চিকিৎসা খরচ, যেই ভয়ংকর মানসিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে আমার পুরো পরিবার এক-একটা দিন পার করছে, যেই ট্রমার মধ্য দিয়ে আমি আর রাহাত সব সামলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। কীভাবে আশা করেন এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর খুব ক্ষতিপূরণ চাই বলে বারবার আপনাদের কাছে যাব?’

সবশেষ তিনি লিখেছেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করলাম আবারও। গণমাধ্যমের অবস্থান ক্লিয়ার এক্সিডেন্টের দিন থেকে। তারা ভিউ চায়, ক্লিক বিট চায়, তারা চাইলে কলমের খোঁচায় দফারফা করে ফেলতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তাই তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই। সহকর্মীদের অবস্থান ক্লিয়ার, সহমর্মিতা দেখাবে, কিন্তু প্রতিবাদ করবে না। আমার চামড়ার দাম তো কম, চামড়ার বাজারমূল্য প্রতি প্রজেক্ট ৭০-৮০ হাজার হলে দৃশ্যপটই ভিন্ন হতো। কিন্তু সংগঠনের আসলে অবস্থানটা কী, আমি ক্লিয়ার না। কীসের ভয়ে নিজ উদ্যোগে হাউস মালিককে ডেকে তার গাফিলাতির জন্য ক্ষমা চাওয়ানো হলো। চাওয়া তো এটুকুই। এতটুকু করতে পারছেন না। এটা করতে কমিটি লাগে? জুজুর ভয়টা কোথায়?’

এমটিআই