বিনোদন ডেস্ক : অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যু ঘিরে এরইমধ্যে সামনে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। আটক হয়েছেন তাঁর প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রাফী। আবার কেউ কেউ অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলেও ধারণা করছেন। যাই হোক, মৃত্যুর তিন থেকে চার মাস আগে থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন হিমু। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে এটিএন বাংলার ‘স্বপ্নের রানী’ শিরোনামের এক ধারাবাহিক নাটকে। কাকতালীয়ভাবে হিমুর মৃত্যুর দিনই প্রচারিত হয়েছে নাটকটির শেষ পর্ব।
জানা যায়, মারা যাওয়ার ১০-১২ দিন আগে হিমু এই ধারাবাহিকের শুটিং সম্পন্ন করেছিলেন। সেখানেই শুটিং সেটে মেকাআপ রুমে সহকর্মীদের বলেছিলেন তাঁর শেষ ইচ্ছের কথা। শুটিং সেটের ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এমনই কিছু কথা বলেছেন তাঁর সহশিল্পী অভিনেত্রী স্বর্ণলতা দেবনাথ।
তিনি বলেন, ‘‘তিন থেকে চার মাস আগে ‘স্বপ্নের রানী’ শুটিং সেটের মেকআপ রুমে আপু হঠাৎ করেই বলছিল, ‘আচ্ছা আমি যদি মারা যাই বা চলে যাই তাহলে এই যে আমার গাড়ি, ফ্ল্যাটটা এটা কি আমি অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে পারবো?’ আপুর ওই কথা শুনে আমরা সবাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। যে হঠাৎ করে কেন এই কথা বলছে। ওই দিন আমাদের পরিচালক থেকে শুরু করে মেকআপ রুমে অনেকেই ছিল। তারপর আপুকে আমরা জিজ্ঞেস করছিলাম কেন এসব কথা বলছো। তখন আপু বলেছিল, ‘মানুষের তো অনেক কিছু হতে পারে। আমার না আর বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমি যদি মরে যাই তাহলে এগুলো অনাথ আশ্রমে দিয়ে যেতে চাই।’ তখন আমরা আপুকে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করি। যতদিন শুটিং থাকতো আপুকে খুব ব্যস্ত রাখতাম।’’
হিমুর সঙ্গে একাধিক নাটকে কাজ করা এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, আপু একা থাকতে থাকতে অনেকটা ডিপ্রেসড হয়ে গেছেন। প্রথম প্রথম যখন তাঁর সঙ্গে কাজ করতাম, তখন আপু বিগো অ্যাপসে অনেক ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু শেষ দিনগুলোতে তিনি অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলেন। একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন, কাজে মনোযোগী ছিলেন। আমরা যে চঞ্চল হিমু আপুকে দেখেছি, শেষ সময়ে ওই চঞ্চলতা পাইনি তাঁর মাঝে।’’
বর্তমানে হিমুর মৃত্যুর ঘটনা গড়িয়েছে আদালতে। আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় কারাগারে আছেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাফী। যেহেতু এ ঘটনায় মামলা চলমান, এ ছাড়া হিমুর পরিবারের সদস্যরাও বেঁচে নেই, তাই তাঁর সম্পত্তি (ফ্ল্যাট-গাড়ি) আদালতের নির্দেশেই বণ্টন হবে।
এমনটাই জানালেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। যেহেতু হিমুর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, তাই আদালত থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকবে তাঁর সম্পত্তি। দলিলপত্র চেক করে দেখা হবে কোনো উইল আছে কি না। পরে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই মোতাবেকই সব কিছু হবে।’
লক্ষ্মীপুরে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়রা হিমু। তখন গ্রামের বাড়িতে কারও সঙ্গে কথা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘হিমুর পরিবার বলতে খালা ও খালাতো ভাই আছেন। গ্রামে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২ নভেম্বর মারা গেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। উত্তরার নিজ বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় তাঁকে উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তখন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রুফি। পরদিন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।