ঢাকা : রুনা লায়লাই সম্ভবত একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এই তিন দেশেই সমানভাবে জনপ্রিয়। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের সংগীত ক্যারিয়ারে ১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি। এজন্যই বোধহয় তিনি সংগীত জগতের বিস্ময়কর এক নাম। এছাড়াও তাকে বলা হয় ‘কুইন অব মেলোডি’।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পীর জন্মদিন। সত্তর পেরিয়ে পা রেখেছেন জীবনের ৭১ বসন্তে। ঘড়ির কাটা বারোটা ছোঁয়ার আগেই সোশ্যালে তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে সহকর্মী ও ভক্ত অনুরাগীরা। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করে তুলছেন। তবে বিশেষ এই দিনটিতে তিনি দেশে নেই। স্বামী অভিনেতা আলমগীরসহ গিয়েছেন ভারতের কলকাতায়। আগে থেকেই এ দিনে তার দেশের বাইরে থাকার কথা ছিল। গত কিছুদিন সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
জানা গেছে, কলকাতায় কোনো অনুষ্ঠান নয়, বেড়াতেই গিয়েছেন। ফিরবেন আগামী ২০ নভেম্বর। এবার জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন না থাকলেও পরিবারের সঙ্গেই উদযাপন করবেন তিনি। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষ্যে চ্যানেল আই তারকা কথনে ‘আজ রুনা লায়লার জন্মদিন’ শিরোনামে একটি বিশেষ পর্ব প্রচারিত হবে আজ বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে।
জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘দিনটি এলে বেশ ভালো লাগে। সবাই বিশেষ এ দিনে আমাকে মনে করেন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানাজন নানা কথা লিখেন খুব গুছিয়ে। সেসব কথা আমি মন দিয়ে পড়ি। নিজের সম্পর্কে অবগত হই। জন্মদিন এলে আব্বা আম্মার কথা খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে আমার বোন দীনা লায়লার কথা। সবাই আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, আল্লহ যেন ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।’
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম গ্রহণ করেন রুনা লায়লা। বয়স যখন আড়াই বছর তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। সংগীতশিল্পী মায়ের কাছে শিখেছেন সংগীতের প্রাথমিক ব্যাকরণ। এরপর করাচির সংগীতজ্ঞ আব্দুল কাদের পিয়ারাঙ্গ ও হাবীব উদ্দিন খানের কাছে তামিল নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে গান শুরু করেন রুনা। এরপর মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকের খাতায় নাম লেখান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্লেব্যাক করেন পাকিস্তানের অনেক ছবিতে।
[211314]
১৯৭৪ সালে ‘এক ছে বারকার এক’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু হয় তার। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু গানে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যান। ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি রুনা লায়লাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এ গানটি পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেরই গানপাগল শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার গাওয়া গজল গানও উপমহাদেশের শ্রোতাদের কাছে সেই সময়েই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
বাংলা-হিন্দি-উর্দু ছাড়াও গুজরাটি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু, বেলুচ, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালীয়, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষার গান তার কণ্ঠে প্রাণ পেয়েছে। মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি সংগীত পরিচালক-সুরকার নিসার বাজমিরের প্রতিদিন ১০টি করে তিনদিনে ৩০টি গান রেকর্ড করেন, যা পৃথিবীর একদিনে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি গানের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠায়।
ক্যারিয়ার জুড়ে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে ছয় বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। এছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
শুধু গানই নয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন আইকনেও পরিণত হয়েছেন তিনি। তার সাজসজ্জা, পোশাক, গাওয়ার ভঙ্গি থেকে শুরু করে সবকিছুই তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয়। তার গাওয়া অসম্ভব জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে দামা দাম মাস্ত কালান্দার, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব, পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম বন্ধু ভাগ্য হইলো না, যখন থামবে কোলাহল, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, যখন আমি থাকবো না গো আমায় রেখো মনে।
এমটিআই