ঢাকা : নাম তার আজিজ মোহাম্মদ। ভাই তার বংশের উপাধি। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই তাকে গডফাদার মনে করেন। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদেরকে ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। অনেক তামিল বা গুজরাটি সিনেমায় এরকম দেখা গেছে। কিন্তু নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আজিজ মোহাম্মদ ভাই কি সত্যি ডন বা গডফাদার।
যদিও কাগজ কলমে আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন ব্যবসায়ী। বৈধ ও অবৈধ দুইটাই। ১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করেন ব্যবসা। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারেরও আজীবন সদস্য।
[222961]
ব্যবসার পাশাপাশি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের আরেকটি পরিচয় তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক। বলা যায় ৯০ এর দশকে এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এসে ব্যবসায়ী পরিচয় ছাপিয়ে যান তিনি। নতুন নায়িকা মডেল তৈরিতে তার খ্যাতি আছে ফিল্ম পাড়ায়। একারণে চলচ্চিত্রে এসে আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন তিনি। রহস্যময় কারণে পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতো তাকে। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।
চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প আছে। এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নারীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টর কারণে। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাকে মুক্ত করতে আগাখান বাংলাদেশ পর্যন্ত এসেছিলেন। এতে ধারণা করা হয় অপরাধ জগতের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
পরবর্তীতে এক একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই তার অপরাধ জগতের বিচরণের বিষয়টি পরিস্কার হয়। যদিও সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করে পার পেয়ে যান। তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যদিও সেটাকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও পারিপার্শিক আলামতেও এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই মনে হয়।
আরও সন্দেহ বাড়িয়ে দেন সালমানের স্ত্রী সামিরার থাইল্যান্ডে বসবাসের কারণে। শোনা যায় সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে।
[222954]
এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন হন আরেক চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরী। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারনা। যদিও মামলার মামলার এজহার বলা হয়েছে ঢাকা ক্লবের গান নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এঘটনার জেরেই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করা হয় সোহলে চৌধুরীকে। এই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হলো আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের।
বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আর নারীদের নিয়ে আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটান। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন।
এমটিআই