ঢাকা: প্রধান দুই কারণে উপকূলের জেলাগুলোতে এবারের জলোচ্ছ্বাস ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পূর্ণিমার-লগ্ন ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাত প্রায় একই সময়ে সংঘটিত হয়। এতে স্থান ভেদে ৬ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস তৈরি হয়।
এর ফলে ধেয়ে আসা অস্বাভাবিক উঁচু ঢেউ মোকাবিলা বিদ্যমান বাঁধের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এছাড়া উপকূলের বাঁধ অধিকাংশ স্থানেই দুর্বল। যে কারণে অনেকস্থানে তা ভেঙে গেছে। আবার কোথাও সৃষ্টি হয় ফাটল।
এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় কোথাও বাঁধ দেবে গেছে। সবমিলে বাঁধ টপকে কিংবা ভেঙে বা ফাঁক গলে পানি হু হু করে ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপে এই তথ্য জানা গেছে।
যদিও ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে একমত নয় সরকারি সংস্থাগুলো। তবে ঘূর্ণিঝড় এবং পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, ৯ জেলায় ১৬টি নদী স্থান ভেদে বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমারও সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৬ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদীগুলো হচ্ছে- ভদ্রা, ইছামতি, রূপসা-পশুর, শিবসা, দড়াটানা, বেতানাই-খোলপেটু, কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, স্বরূপকাঠি, কচা, বুড়িশ্বর, বিশখালী, সুরমা-মেঘনা ও বুড়িশ্বর-পায়রা। আর জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত জেলাগুলো হচ্ছে, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা।
এফএফডব্লিউসির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এখন উপকূল থেকে কেটে গেছে। সাগর শান্ত আছে। আগামী ৬ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূলীয় নিুাঞ্চল থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ গত ৩ বছরে চারটি ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রতিবেদন হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়গুলো উঁচু ঢেউ বা বাড়তি পানি নিয়ে আসে। আবার এ ঝড় যদি ভরা কটালে আসে তাহলে বড় ঢেউ আরও প্রভাবিত হয়। তখন ঢেউয়ের আকার বড় হয়।
২০০৯ সালে আইলার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি বলে মনে হচ্ছে না। গত শতকের ষাটের দশকে করা বাঁধের ওপরই আমরা এখনও চলছি। অনেক স্থানে তা শুধু নড়বড়ে বা ভাঙেইনি, যেখানে আছে সেখানে তা দেবে গেছে।
তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের বাড়তি উচ্চতা, পূর্ণিমাকালে ঘূর্ণিঝড়ের ঢেউসহ অন্যান্য বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাঁধ তৈরি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এবারের এই দুর্যোগে আমরা হয়তো পড়তাম না।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এ বছরে ঘূর্ণিঝড় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানার পরও এই দশা হয়েছে। যদি এটি সাতক্ষীরা বা ভোলায় আঘাত হানত তাহলে বাংলাদেশের কী দশা হতো তা ভাবনারও বাইরে। তবে এবারে মাত্র ৩ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেয়া হয়েছে।
শুধু বাতাস বিবেচনায় নিয়ে সংকেত দেয়ায় আজকে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন। জোয়ার বা ঢেউকে বিবেচনায় নেয়া হলে মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেন।
আজকে খাদ্য-পানিসহ অন্যান্য সংকটে পড়তেন না। তিনি মনে করেন, সতর্ক সংকেত প্রদান ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। যথাযথ সংকেত না দেয়ায় দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত
সোনালীনিউজ/এইচএন