ঢাকা : দেশের ৫১ জেলায় বর্তমানে দাবদাহ চলছে। নীলফামারী আর দিনাজপুরের ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বাকি জেলাগুলোর কোথাও মাঝারি, কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে এর চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে অনুভূত তাপমাত্রা।
ব্যারোমিটারে পারদ যেখানেই থাকুক না কেন, এর চেয়ে ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আর এই খরতাপকে আরও উসকে দিচ্ছে বাতাসের জলীয়বাষ্প। ফলে অস্বস্তিকর অবস্থা আরও বেড়েছে।
বিশেষ করে শরীরের লোমকুপ থেকে বের হওয়া ঘাম জলীয়বাষ্পের আধিক্যে বাতাসে মিশতে পারছে না। লেপ্টে যাচ্ছে শরীরের চামড়ায়। ফলে অস্বস্তিকর অনুভূতি বেশিই হচ্ছে। সোমবার দিনাজপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকালে ঢাকার বংশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি।
দেশি-বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী শনিবার বা ১০ জুন পর্যন্ত এই খরতাপ অব্যাহত থাকতে পারে। রোববারের দিকে কিছু বৃষ্টি হতে পারে। সেই বৃষ্টি ঢাকায়ও হতে পারে। তবে সেদিনও ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি থাকতে পারে। ১৩ জুনের দিকে ঢাকার ওপর থেকে তাপপ্রবাহ পুরোপুরি চলে যেতে পারে। ১১ জুনের দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ১৯ জুন পর্যন্ত চলতে পারে বলে মার্কিন আবহাওয়া সংস্থা দ্য ওয়েদার চ্যানেল পূর্বাভাস করেছে।
প্রসঙ্গত, সামান্য ব্যতিক্রম বাদে দেশের অধিকাংশ এলাকায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল।
এছাড়া রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৮, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৮, ময়মনসিংহে ৩৬, সিলেটে ৩৫, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ২, খুলনায় ৩৮ এবং বরিশালে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মৃদু’ এবং ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মাঝারি’ তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে মৌসুমি বায়ুর বিস্তার হলেই এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটতে পারে। সাধারণত প্রতিবছর ৩১ মে বা এর পর টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মৌসুমি বায়ু। সেই বায়ু সঙ্গে নিয়ে আসে বর্ষাকাল। এর ধাক্কায় দেশের ওপর থেকে পশ্চিমা লু হাওয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন পরিস্থিতি অনেকটা মোলায়েম হয়। গরম থাকলেও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি প্রাণ-প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মের পরেই সাধারণত মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশে আসার কথা। কিন্তু কোনো কোনো বছর এর বিলম্ব ঘটে। এটা জুনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ লেগে যায়।
এখন এবার যত আগে আসবে, বিদ্যমান দাবদাহ তত আগে বিদায় নেবে। এখন পর্যন্ত যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী সপ্তাহে বা ১২ জুনের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। তখন এটি বৃষ্টি ঝরালে পরিস্থিতি তুলনামূলক শীতল হবে।
এদিকে বৃষ্টিহীনতা ছাড়াও এই গরমের জন্য দিনে ৮-১০ ঘণ্টা ধরে সূর্য কিরণ দিচ্ছে। এতে ভূপৃষ্ঠ বেশি সময় গরম হচ্ছে। এছাড়া বাতাসের গতিবেগও তুলনামূলক কম। এটিও প্রভাব ফেলছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।
তবে সোমবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বর্তমানে দেশের যে ৫১ জেলায় দাবদাহ চলছে, সেগুলোর মধ্যে নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত চলে আসতে পারে। তবে দেশে প্রবেশ করলে তা চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বিস্তারলাভ করতে পারে। সিলেটের দিকেও এ সময়ে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি।
এদিকে তীব্র গরমে মানুষ ও প্রাণীর প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। সোমবার বিকালেও ঢাকার বংশাল এলাকায় ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড পাওয়া গেছে দ্য ওয়েদার চ্যানেলে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ কারণে খুবই তপ্তদশা বিরাজ করছিল। ফ্যানের নিচেও ঘামতে হয়েছে। ঘরের ভেতরে বালতি আর বাসার ছাদের ট্যাঙ্কের পানিও গরম ছিল। এমনকি ঘরে খাবার পানি পর্যন্ত গরম হয়ে যায়। দাবদাহে প্রায় সব বয়সের মানুষেরই নাকাল অবস্থা। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। খেটে খাওয়া মানুষেরও ত্রাহিদশা।
এই গরমে ডায়রিয়া-আমাশয়-জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই