বেশি শীত অনুভূত হওয়ার কারণ কী

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ১১:২৪ এএম

ঢাকা : তীব্র শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশজুড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন ও কনকনে শীতল পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো কোনো অঞ্চলে টানা সাত দিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে যে, এবছর শীত বেশি পড়ছে। কেউ কেউ একে ‘অস্বাভাবিক’ও বলছেন। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ভিন্ন কথা।

প্রতিষ্ঠানটির হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সেবছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা গিয়েছিল।

সেখানে এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো জেলাতেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।কিন্তু তারপরও মানুষ কেন ‘অস্বাভাবিক’ শীতের কথা বলছে?এই প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, খাতা-কলমে তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও বেশ কিছু কারণে এবার শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।

[215604]

যেসব কারণে বাংলাদেশে এ বছর শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে, বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে সম্প্রতি বেশ কয়েকবারই ঢাকাকে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় দেখা গেছে। যানবাহন, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানান কারণে সারাদেশেই আগের চেয়ে বায়ু দূষণ বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে।

আকহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, দূষিত এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে রয়েছে, যা মেঘ ও কুয়াশা তৈরিতে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে।

এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। এর মধ্যে আবার শুরু হতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। শুক্রবার নাগাদ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই সময়ে তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া রাতে সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।তাপমাত্রা আট থেকে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

[215537]

চুয়াডাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ, ঈশ্বরদীসহ অল্প কয়েকটি জেলায় এবছর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা গেলেও সেটি তীব্র আকার ধারণ করেনি।  তবে জানুয়ারির শেষের দিকে সারাদেশে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

এমটিআই