ঢাকা: ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে এখনো তাপপ্রবাহ চলছেই। প্রচণ্ড গরমে সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করছেন। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সোম ও আগামীকাল মঙ্গলবারও গরমের এই দাপট থাকতে পারে।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মোংলা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খুলনা, পাবনার ঈশ্বরদী, নওগাঁর বদলগাছী, নীলফামারীর সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল ছিল ৪০ ডিগ্রি ও এর ওপরে। এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। তবে সিলেটে ১৬ মিলিমিটার ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
প্রচণ্ড গরমের কারণে সারা দেশে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুপুরের আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া শহরের সড়কগুলো। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাপপ্রবাহ আজও অব্যাহত থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
প্রচণ্ড গরমের কারণে সারা দেশে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুপুরের আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া শহরের সড়কগুলো। তাপপ্রবাহের কারণে পানিসংকটে পড়েছেন কুষ্টিয়ার কৃষকেরা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের আওতায় খালে পানি নেই। আশপাশের নলকূপেও পানি উঠছে না। কুমারখালীর যদুবয়রা গ্রামের কৃষক লায়েব শেখ বলেন, এবার খালে-বিলে পানি নেই। বৃষ্টিও নেই। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গভীর নলকূপেও পানি তুলতে সমস্যা হচ্ছে।
[222275]
যশোরে ১৩ দিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে। ফলে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরের পথে পথে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে ঠান্ডা মাঠা বিক্রি করেন মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলী। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে মাঠা বিক্রি বাড়ে। ১৫ দিন ধরে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ লিটার মাঠা বিক্রি হচ্ছে। এর আগে দিনে ২৫-৩০ লিটার বিক্রি করেছেন। যশোরের আফিল অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, গরমে গতকাল এক দিনেই খামারের প্রায় ১১ হাজার মুরগি মরেছে।
সাতক্ষীরায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, ২৫ বছরের মধ্যে এটাই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। শহরের খুলনা রোড মোড়ে আবদুল গফুর প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কাপ চা বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে মানুষ চা পান করছেন না। এখন সন্ধ্যার পর ৬০-৭০ কাপের বেশি চা বিক্রি হচ্ছে না। এতে তিনি আর্থিক অনটনে পড়েছেন।
গরমে বিপাকে পড়েছেন আমচাষিরাও। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আমচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরপরই শুকিয়ে যাচ্ছে। আম ঝরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আশানুরূপ আম হবে না।
টানা গরমে খেটে খাওয়া মানুষকে স্বস্তি দিতে গতকাল চুয়াডাঙ্গা শহরে একাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করা হয়।
এআর