কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, ডোবা- নালায় ফুটেছে কচুরিপানা ফুল। এ ফুল ফুটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কচুরিপানার ফুলের নির্মল সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যোগ করেছে নান্দনিকতা। তাই প্রকৃতি মেতেছে এখন নতুন রূপে। চোখ জুড়ানো অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষেরা।
জেলার বিভিন্ন খাল, ডোবা ও জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুঁটে আছে অযত্নে বেড়ে ওঠা সবুজের মাঝখানে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপী রঙে কচুরিপানা ফুল। দেখলে মনে হবে যেন ফুলেল চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে জলাশয়গুলো। প্রস্ফুটিত এ সব ফুলের অপরুপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কের মুক্ত জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুলগুলো। সড়কের পাশে এই অসাধারণ কচুরিপানার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নজর কাড়ছে সবার। দু-চোখ যে দিকে যায়, শুধুই মনোমুগ্ধকর কচুরিপানার ফুল দেখে মানুষের হৃদয় জড়িয়ে যায়।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় মন। যেন প্রকৃতি সেজেছে এক অপরূপ সৌন্দর্যে। পানির উপর বিছানো সারি সারি সবুজ পাতা আর ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। দূর থেকে মনে হয় কেউ যেন সবুজ চাঁদরে ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে।
সৌন্দর্যের পাপড়ি মেলে ধরা কচুরি ফুলের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই তুলছেন ছবি। ছবির ক্যানভাসে একই ফ্রেমে আবদ্ধ হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। খাল বিল ও জলাশয়ে ফুল ফুটে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা খাল-বিল কিংবা নদী-নালা থেকে শিশির ভেজা কচুরিপানার ফুল তুলে খেলা করছে। গ্রামের মেয়েরা কেউবা খোঁপায় বাঁধছে এ ফুল।
চোখ জুড়ানো সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপী রঙয়ের কচুরিপানা ফুলের উঁকি হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। ফোটা ফুলের সঙ্গে কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে নতুন করে ফোটার আশায়। সবুজ পাতা আর হালকা গোলাপী ফুলের মিলন মেলায় মনের আনন্দে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুক। ফুটন্ত ফুলের মাথায় খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল।
জানা যায়, কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান এক ধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এর আদি নিবাস। বাংলাদেশের সকলের কাছে সুপরিচিত। বর্ষাকালে অত্যধিক পরিমাণে জন্মায় ও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-জলাশয় ভরে তুলে। এটি অবাধ ভাসমান গুল্ম ও নিচে থেকে একথোকা লম্বা গুচ্ছমূল, ওপরে খর্বিত কাণ্ডে একথোকা পাতা।
পাতার বোঁটা খাটো পেটমোটা ও স্পঞ্জি। পাতাবেষ্ঠিত মঞ্জুরি ১৫-২০ সে.মি লম্বা ও দণ্ডে থাকে ১০-১২ সে.মি লম্বা দৃষ্টিনন্দন ফুল। বাংলাদেশে কচুরিপানা একটি আগাছা। জন্মায় বদ্ধজলাশয়ে, খাল-বিল, ডোবা -নালাসহ সর্বত্র। বর্ষাকালে এ পানা দ্রুতই বংশ বৃদ্ধি করে।
চকচকে সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিভাগে এরা জন্মায় ও বংশবিস্তার করে। এর কাণ্ড থেকে দীর্ঘ, তন্ত্রময় বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি কালো। একটি কাণ্ড থেকে ৬টি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়ে থাকে। এই ফুলের পাপড়ি নরম হয়। এই উদ্ভিদ দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এদের সাতটি প্রজাতি রয়েছে।
সৌন্দর্য বিলানোর পাশাপাশি এই উদ্ভিদটি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে। এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটিকে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। এটি থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আসছে। পানির ওপর কচুরিপানার স্তূপ করে এর ওপর সবজি চাষ করা হয়।
কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা দর্শনার্থীর শিক্ষার্থী রফিক করিম ও সাজু কাজী জানান, কচুরিপানা ফুলের গন্ধ না থাকলেও এর সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে, তাই বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমরা এ ফুল দেখতে এসেছি, দেখলাম ছবি তুললাম অনেক ভালো লাগলো।
কৃষিক্ষেত্রে কচুরিপানার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কৃষকেরা কচুরিপানা উঠিয়ে জমিতে ফলানো আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করছেন। কচুরিপানা থেকে এখন তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কচুরিপানা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমার জমিতে অনেক কচুরিপানার ফুল জন্মেছে সেই ফুল দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ছুটে আসতেছেন, বর্তমানে পানি কমার কারণে কচুরিপানা জমির মধ্যে স্তুপ দিয়ে রেখেছি, যেটি আমাদের সার হিসেবে কাজে লাগবে।
শাহ বাজার আবুল হোসেন ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার জীব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, কচুরিপানা ফুল একটি শোভা বর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে, এছাড়াও তিনি জানান কচুরিপানা মাছের খাদ্য হিসেবে গরুর খাদ্য হিসেবে ও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সার হিসেবে এই সার ব্যবহার করা যায়।
এসএস